ধানমন্ডিতে বাসার নিচে পড়ে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়েটির লাশ

প্রতীকী ছবি

বাসার নিচে নিথর দেহটি পড়ে থাকার কিছুক্ষণ আগেও বাবার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়েছিল তাজরিয়ান মোস্তফার (১৯)। বলেছিলেন মিনিট দশেকের মধ্যেই বাসায় ফিরছেন। কিন্তু বাসায় আর ফেরা হয়নি। বাসার নিচে তাঁর রক্তাক্ত দেহটি পড়ে ছিল।

পরিবারের দাবি, তাজরিয়ানকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ ভবনের আরেকটি ফ্ল্যাটের মালিকের ছেলের দিকে। পুলিশ বলছে, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ধানমন্ডির ৮ নম্বর সড়কের একটি বাসায় পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন তাজরিয়ান। স্বজনেরা জানিয়েছেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করার পর সপরিবার মালয়েশিয়ায় চলে যান তাজরিয়ান। সেখানে এ লেভেল পাস করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন। করোনাভাইরাসে বাবার হোটেল ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় মাস তিনেক আগে তাঁরা ঢাকায় আসেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যেই শুক্রবার সন্ধ্যায় বাসার নিচে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়। সাড়ে ছয়টায় পার্শ্ববর্তী গ্রিন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। সেখানে আজ শনিবার তাঁর ময়নাতদন্ত হয়েছে।

তাজরিয়ানের ফুফা মো. হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, তাজরিয়ানরা ছয়তলা ভবনের চারতলায় থাকতেন। শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে তাজরিয়ান ছাদে যান।

তাজরিয়ান ছাদে থাকাকালেই তাজরিয়ানের বাবা মুঠোফোনে কল দেন। তাজরিয়ান ১০ মিনিটের মধ্যে বাসায় ফিরে যাচ্ছে বলে বাবাকে জানায়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তার দেহটি নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

হুমায়ুন কবির বলেন, তাজরিয়ান খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল। দেশে ফেরার পর তারা যে বাসাটিতে ওঠে, সেই বাসারই এক ফ্ল্যাট মালিকের ছেলে তাকে উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি মা–বাবাকে জানালে তারা ওই ছেলের মা–বাবার সঙ্গে কথাও বলেন। কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাননি। তাঁরা মনে করছেন, ওই ছেলেটিই ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে তাকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। পুরো ঘটনার তাঁরা সুষ্ঠু তদন্ত চান। তাজরিয়ানের লাশ দাফন শেষে তাঁরা মামলাও করবেন।

তাজরিয়ানের মৃতদেহের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, তাজরিয়ানের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে তিনি ওপর থেকে পড়ে মারা গেছেন মনে হয়েছে। তাঁর ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। এসব পরীক্ষা–নিরীক্ষার প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, পুরো ঘটনা তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। তাজরিয়ানের পরিবারের অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে তাজরিয়ান কী কারণে, কীভাবে মারা গেলেন, তা জানা যাবে।