গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে রুটের পরিধি বাড়ছে

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে বাস রুট রেশনালাইজেশনের ১৫তম সভা।সভায় দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেনছবি: প্রথম আলো

গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে রুটের পরিধি বাড়িয়ে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত কোম্পানির মাধ্যমে বাস চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে ঘাটারচর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বাস চালুর ঘোষণা ছিল।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে বাস রুট রেশনালাইজেশনের ১৫তম সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।

২০০৪ সালে ঢাকার জন্য করা ২০ বছরের পরিবহন পরিকল্পনায় ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ বা বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ এই ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে লক্কড়ঝক্কড় বাস তুলে নেওয়া। সহজ শর্তের ঋণে নতুন বাস নামানো। বাস চলবে ৫-৬টি কোম্পানির অধীনে। মালিকেরা বিনিয়োগের হার অনুসারে লভ্যাংশ পাবেন।

দক্ষিণের মেয়র বলেন, ‘মালিকদের মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপ করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি চিঠি দেব যাতে করে প্রাথমিকভাবে এক শ কোটি টাকা বরাদ্দ নির্ধারণ করা যায়। যাতে করে যে বাসগুলো এই রুটে চলবে এর আধুনিকায়ন করার জন্য যে খরচ হবে, যে বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে, সে বিনিয়োগ যেন তারা সেখান থেকে করতে পারে। স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদে মালিকেরা যাতে এই ঋণ পান, সে ব্যাপারটিও চিঠিতে থাকবে। সামগ্রিকভাবে এ বিষয়টা শেষ করতে পারলেই ঢাকাবাসীকে সুফল দিতে পারব।’

ঢাকার গণপরিবহনের মালিক দুই হাজারের বেশি। আর ঢাকা ও আশপাশে ২০০–এর বেশি পথে (রুট) বাস চলাচল করে। যাত্রী তোলার জন্য এক বাসের চালক অন্য বাসের সঙ্গে পাল্লায় লিপ্ত হন। এর ফলে দুর্ঘটনা বাড়ে। এই ব্যবস্থা পরিবর্তনে ২০০৪ সালে ঢাকার জন্য করা ২০ বছরের পরিবহন পরিকল্পনায় ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ বা বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ এই ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে লক্কড়ঝক্কড় বাস তুলে নেওয়া। সহজ শর্তের ঋণে নতুন বাস নামানো। বাস চলবে ৫-৬টি কোম্পানির অধীনে। মালিকেরা বিনিয়োগের হার অনুসারে লভ্যাংশ পাবেন।

আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নীতিমালার খসড়া

মেয়র তাপস বলেন, ঘাটারচর থেকে শুধু মতিঝিল পর্যন্ত রুট নির্ধারণ করা হলে এটি ফলপ্রসূ না–ও হতে পারে। এ জন্য রুট বাড়িয়ে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত করা হয়েছে। এই রুটে কোম্পানির মাধ্যমে বাস কীভাবে চলবে, কতগুলো বাস চলবে, কতগুলো প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত থাকবে, আয় কীভাবে বণ্টন হবে, কীভাবে পরিচালিত হবে—সামগ্রিক বিষয় নিয়ে নীতিমালা হবে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অংশীজনদের নিয়ে বসে নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করবে। আগামী সভার আগেই খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করলে কোম্পানি গঠনের দিকে এগিয়ে যাবেন। এ রুটে ১ এপ্রিল থেকে বাস চলার কথা।

এই রুট চালুর ক্ষেত্রে যাত্রীছাউনি, বাসস্টপেজসহ অবকাঠামো নির্মাণে কিছু জমির প্রয়োজন হবে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, অবকাঠামোগুলোর কাজ যাতে শেষ করা যায়, এ জন্য আগামী সভায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে এ বিষয়ে অলোচনা করা হবে। বর্তমানে এই রুটে যেসব বাস চলাচল করে, তার তথ্যগত কিছু ভুল আছে। কারণ, দীর্ঘদিন এই তথ্যগুলো হালনাগাদ করা হয়নি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিআরটিএ এই তথ্যগুলো হালনাগাদ করবে। ঢাকার কোন রুটে কোন বাস চলছে, কতগুলো বাস চলছে, এ–সংক্রান্ত তথ্য আগামী ৯০ দিনের মধ্যে বিআরটিএ হালনাগাদ করবে।

এখন এ রুটে যাদের বাস চলছে, অন্যরা যারা এই রুটে বাস চালাতে চায়, সবাইকে নিয়ে সমন্বয় করা হবে জানিয়েছে মেয়র তাপস বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাসমালিকেরা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসবেন। আয় ও ব্যয়ের হিসাব যাতে ঠিকমতো হয়, সে জন্য একটি নীতিমালা তৈরি হবে। নীতিমালার আলোকে প্রাইলট এই প্রকল্পে জয়েন্টভেঞ্চার অ্যাগ্রিমেন্ট হবে। এরপর এটাকে একটা পূর্ণাঙ্গ কোম্পানিরূপে চালু করা হবে।

ভাড়া নির্ধারণ করবে বিআরটিসি

এই রুটে চলাচলকারী বাসে যাত্রীদের জন্য ভাড়া নির্ধারণের দায়িত্ব বিআরটিসিকে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, রাত ১২টার পর সড়কে যাতে বিআরটিসির বাস না থাকে, গত সভায় এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে অনেক দূর অগ্রগতি হয়েছে। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় কিছু বাস এখনো সড়কেই থাকছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিআরটিসির সব বাস নিজস্ব ডিপো বা টার্মিনাল বা তাদের জায়গায় রাখার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

উত্তরের বাস হেমায়েতপুরে আর দক্ষিণের বাস কেরানীগঞ্জ ও কাঁচপুরে

ঢাকার আশপাশে আন্তজেলা বাস টার্মিনাল করার জন্য ১০টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছিল উল্লেখ করে মেয়র তাপস বলেন, এর মধ্যে কয়েকটি জায়গা তারা পরিদর্শন করেছেন। সরেজমিন পরিদর্শনে তাঁরা বাটুলিয়াতে একটি জায়গা নির্ধারণ করেছেন। সেখানে আন্তজেলা একটি টার্মিনাল হবে। মূলত উত্তরাঞ্চলের যে বাসগুলো আছে, সেখানে এসব বাস থাকবে। উত্তরাঞ্চলের বাসের জন্য সাভারের হেয়ায়েতপুরে দুটি জায়গা দেখে একটি নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলের বাসের জন্য কেরানীগঞ্জের বাঘাইরে একটি এবং কাঁচপুর এলাকায় আরেকটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই চার জায়গায় আন্তজেলা বাস টার্মিনাল স্থাপন করলে ঢাকা শহরের ওপর থেকে চাপ কমে যাবে। সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনালগুলোকে সিটি টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। বাকি চারটি টার্মিনাল দূরপাল্লার বাসের জন্য নির্ধারিত থাকবে। প্রাথমিকভাবে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী বরাবর দেওয়া হবে।

সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান এহছানে এলাহী, রাজউক চেয়ারম্যান সাঈদ নূর আলমসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন