শেষ সময়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আটকে গেল উচ্ছেদ

ঝিল দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। গত ২ অক্টোবর খিলগাঁওয়ের নতুনবাগে
দীপু মালাকার

মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট নেই বলে জমি উদ্ধারের অভিযান চালানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। সেই ম্যাজিস্ট্রেটের জোগাড় হলো, নেওয়া হলো সব প্রস্তুতিও। কিন্তু শেষ সময়ে এসে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হলো, উচ্ছেদ আপাতত চালানো যাবে না। এতেই রাজধানী খিলগাঁওয়ের নতুনবাগ এলাকায় ঝিল ভরাট করে নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদের পরিকল্পনা থেকে সরে এল গণপূর্ত অধিদপ্তর।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল সোমবার এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার কথা ছিল। সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে পুলিশ মোতায়েন নিশ্চিত করাসহ স্থাপনা ভাঙার যন্ত্র ঠিক করে রেখেছিল গণপূর্ত অধিদপ্তরের রেলওয়ে ডাইভারশন উপবিভাগ। কিন্তু আজ রোববার দুপুরের দিকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা আসে, উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে হবে।

গণপূর্তের দায়িত্বশীল কিছু কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ষাটের দশকে নতুনবাগের ২ দশমিক ৬৮ একর ঝিলের জায়গা সরকার অধিগ্রহণ করে। সেখানে ৩৩ শতাংশ জমি দখল হয়ে গেছে। এই জমি উদ্ধারে তিন দফায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। সাধারণ ডায়েরিতে সৈকত ও শুভ নামের দুই ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়েছিল।

৪ অক্টোবর এ বিষয়ে প্রথম আলোয় ‘ঝিলে যুবলীগ নেতার স্থাপনা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি ঝিল ভরাট করে নতুনবাগে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক রাওফুল আলম খান ওরফে শুভ। এই কাজে তাঁকে সহায়তা করেছেন সরকারেরই আরেকটি সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) প্রধান কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এম এম আহসান আলম ওরফে সৈকত।

আরও পড়ুন

সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিলের দক্ষিণ দিকে মাটি ভরাট করার পর সেখানে হাঁটুসমান ইটের দেয়াল তৈরি করে সীমানা দেওয়া হয়েছে। ভরাট করা অংশে একটি ঘর তৈরি হয়েছে। নতুনবাগ এলাকায় ইসমাইলের গলি হয়ে ঝিলের প্রবেশমুখেই গেট নির্মাণ করে ভেতরে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টিনের তৈরি আরও একটি স্থাপনা ভরাট করা জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা রাওফুল প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছিলেন, ওই জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। ১৯৫৬ সালে তাঁর বাবা ফিরোজ সেখানে ১২১ শতাংশ জমি কিনেছিলেন। এখন পর্যন্ত তিনি ৩৭ শতাংশ জায়গা দখলে নিয়েছেন। গণপূর্তের সঙ্গে জমির রেকর্ড সংশোধনে এ বিষয়ে একটি মামলা চলছে।

রাওফুল এ বক্তব্য দেওয়ার পরেই সেখানে সোমবার উচ্ছেদ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে এরই মধ্যে ওই জায়গা দেখিয়ে আনা হয়েছে বলে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী সব প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ সময়ে এসে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর সোমবারের অভিযান স্থগিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (উন্নয়ন শাখা-৯) মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এই জমি নিয়ে আইন শাখায় একটি মামলা দেখা গেছে। উচ্ছেদ অভিযানের আগে সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট হতে হয়। বিষয়টি আগে স্পষ্ট ছিল না। মামলা-মোকদ্দমা থাকলে তো আদালত অবমাননা মামলা হতে পারে।

তবে কি আইন শাখা থেকে যাচাই-বাছাইয়ের আগেই উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অর্ডার আগেই হয়েছিল। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল অভিযান চালানো হবে। আইন শাখায় আজ মামলার কপি দিয়ে গেছে। মামলা থাকলে আমরা ধারণা নিয়ে নিই স্থগিতাদেশ আছে কি না। উচ্ছেদে কোনো বাধা নেই, আইন শাখা থেকে এমন মতামত পেলে সেখানে অভিযান চালানো হবে।’