কাজ শুরু না করেই আড়াই কোটি টাকার বিল উত্তোলন

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার এই স্থাপনা অপসারণ করেই নির্মিত হওয়ার কথা শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত মাল্টিপারপাস অডিটরিয়াম। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা l প্রথম আলো
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার এই স্থাপনা অপসারণ করেই নির্মিত হওয়ার কথা শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত মাল্টিপারপাস অডিটরিয়াম। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা l প্রথম আলো

বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) একটি মিলনায়তন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু না করেই আড়াই কোটি টাকা বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তামিম এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আফজাল হোসেন এ টাকা তুলে নিয়েছেন।

প্রকল্পটির তদারকি কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী মো. বজলুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, কোনো চাপে নয়, কাজের স্বার্থেই ওই বিল দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন, ঠিকাদার ও এলজিইডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গৌরনদী উপজেলা সদরে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ১৯৭৯ সালে তৎকালীন খুলনা উন্নয়ন করপোরেশন একটি মিলনায়তন নির্মাণ করে। প্রথম দিকে সেটি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজে ব্যবহার করা হতো। ১৯৯৮ সালে এটির নিচতলায় গৌরনদী হাইওয়ে থানা স্থাপন করে এর কার্যক্রম শুরু হয়।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, মিলনায়তনটির পুরোনো ভবনটির নিচতলায় হাইওয়ে থানার কার্যক্রম চলছে। এর এক পাশে থানার অফিশিয়াল কার্যক্রম ও আরেক পাশে পুলিশ সদস্যদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে কোনো কাজের চিহ্ন নেই। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনো কাজই ধরেনি।

জানতে চাইলে গৌরনদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে কাজ হবে বলে আমরা অন্য জায়গায় অফিস ভাড়া নিয়েছি। সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু কাজ না হওয়ায় এখনো এখানেই আছি।’

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল এলজিইডি বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে পুরোনো মিলনায়তনটি ভেঙে সেখানে ৫০০ আসনবিশিষ্ট শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম নামের একটি আধুনিক মিলনায়তন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে। এ জন্য ৭ কোটি ১৬ লাখ ১১ হাজার ২৪৮ টাকা প্রাক্কলনতৈরি করা হয়। গত এপ্রিলে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তামিম এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আফজাল হোসেন তাঁর তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে সেখানে দরপত্র জমা দেন।সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে শতকরা ১০ ভাগ বেশি দরে মেসার্স তামিম এন্টারপ্রাইজকে ৭ কোটি ৮৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪০ টাকা ব্যয়েপ্রকল্পটি বাস্তবায়নে একই মাসে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। আগামী ১৮ অক্টোবর এ কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এখনো কাজ শুরুই করা হয়নি।

উপজেলা এলজিইডির একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিয়মানুযায়ী ঠিকাদারের ওপর আস্থা সাপেক্ষে শুধু চলতি কাজের বিল দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঠিকাদার আফজাল হোসেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করে শতকরা ৩০ ভাগ কাজ শেষ দেখিয়ে আড়াই কোটি টাকার বিল তুলে নিয়েছেন।

তবে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ফজল আহম্মেদ দাবি করেন, ওই ঠিকাদারকে এখনো বিল দেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে গৌরনদী উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আবদুল বারেক বলেন, গত ২২ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তামিম এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে আড়াই কোটি টাকার বিল দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আফজাল হোসেনের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ধরেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠিয়ে আবার ফোন করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।