চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেন জব্দ: এক মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি সম্পন্ন
২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেন জব্দের ঘটনায় দায়েরকৃত চোরাচালান মামলায় ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভুঞার আদালতে শুনানি সম্পন্ন হয়।
আজ বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কোকেন জব্দের ঘটনায় চোরাচালান আইনে ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। হাজির আসামিদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবী নির্দোষ দাবি করে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিরোধিতা করে বলা হয়, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, আসামিরা কোকেন পাচারের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হোক। পরে আদালত আদেশের জন্য আগামী ২ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।
সরকারি কৌঁসুলি আরও বলেন, আইনের পৃথক দুটি ধারা থাকায় আগে মাদক আইনে বিচার শুরু হয়েছে। এটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। আর চোরাচালান আইনের ধারায় আদালতের নির্দেশে র্যাব অধিকতর তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে।
২০১৫ সালের ৬ জুন পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোকেন সন্দেহে চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের চালান জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এরপর ২৭ জুন তেলের চালানের ১০৭টি ড্রামের মধ্যে একটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাসায়নিক পরীক্ষাগারসহ চারটি পরীক্ষাগারে তেলের চালানের দুটি ড্রামের (৯৬ ও ৫৯ নম্বর) নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, সূর্যমুখী তেলভর্তি ওই ১০৭টি ড্রাম আমদানি করা হয়েছিল বলিভিয়া থেকে। সেখান থেকে স্থলপথে উরুগুয়ের মন্টেভিডিও বন্দরে আনার পথে বলিভিয়ার কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নমুনা পরীক্ষা ছাড়া চালানটি কোনো গন্তব্যে না পাঠাতে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করে। কিন্তু বলিভিয়ার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি কাস্টমসের ওই চিঠি গোপন করে সড়কপথে চালানটি মন্টেভিডিও বন্দরে নিয়ে আসে। উরুগুয়ে থেকে চালানটি সিঙ্গাপুর বন্দরে আসে। সেখান থেকে চালানটি কসকো শিপিং লাইনসের কনটেইনারে করে ২০১৫ সালের ১১ মে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়।
কোকেন জব্দের ঘটনায় চট্টগ্রামের বন্দর থানায় ২০১৫ সালের ২৭ জুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও চোরাচালান আইনের ধারায় একটি মামলা হয়। আসামি করা হয় চালানটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদকে।
ঘটনার পাঁচ মাস পর ২০১৫ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ নূর মোহাম্মদকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আটজনকে আসামি করে আদালতে মাদক আইনে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পরে চোরাচালান আইনে পৃথক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। দুটিতেই চালানের গন্তব্য অজানা থেকে যায়। আন্তর্জাতিক চক্র শনাক্ত না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ নারাজি আবেদন করলে আদালত র্যাবকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু র্যাবের তদন্তেও চালানটির গন্তব্য বের করা সম্ভব হয়নি। র্যাব নূর মোহাম্মদসহ ১০ জনকে আসামি করে ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল আদালতে মাদক আইনে অভিযোগপত্র জমা দেয়। আদালত তা গ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়।
১০ আসামির ৪ জন পলাতক রয়েছেন। তাঁরা হলেন লন্ডনপ্রবাসী চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজারের বকুল মিয়া, চালানটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ, মোস্তাক আহমেদ। এর মধ্যে নূর মোহাম্মদ জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছেন। আর অপর তিনজন ঘটনার পর থেকে পলাতক আছেন। জামিনে রয়েছেন কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনসের ব্যবস্থাপক এ কে আজাদ, সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেহেদী আলম, সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাইফুল আলম, আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল। কারাগারে রয়েছেন প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা ও পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান।