সংবাদ সংগ্রহে করতে গিয়ে হামলার শিকার ডিবিসির দুই সাংবাদিক

সাইফুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর তালতলা এলাকায় ভিক্টর ট্রেডিং করপোরেশনে মেডিকেলের যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজের দুই সাংবাদিক। তাঁদের উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ভিক্টর ট্রেডিং করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী কাওছার ভুইয়াসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন ডিবিসির স্টাফ রিপোর্টার সাইফুল ইসলাম ও ক্যামেরাপারসন আজাদ আহমেদ।

হামলার শিকার সাইফুল ইসলামের বরাত দিয়ে তাঁর সহকর্মী আবু দাউদ খান প্রথম আলোকে বলেন, মেডিকেলের যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে ভিক্টর ট্রেডিং করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী কাওছার ভুইয়া ও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী সাইফুল ও আজাদের ওপর হামলা করেন। এ সময় তাঁরা ক্যামেরা ভাঙচুর করে ভিডিও ফুটেজ মুছে দেন।

এদিকে পুলিশের হাতে আটকের আগে ভিক্টর ট্রেডিং করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী কাওছার ভুইয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

আজাদ আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় কাওছার ভুইয়াসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। মামলা হলে কতজনকে গ্রেপ্তার দেখাব, তা পরে জানা যাবে।

এদিকে ডিবিসির রিপোর্টার সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সদস্য। তাঁর ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। ক্র্যাব সভাপতি মির্জা মেহেদী ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান এক বিবৃতিতে জানান, এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম আলোতে ‘নাক কান গলা ইনস্টিটিউট: ২৬ অনিয়মে সাড়ে ২৬ কোটি টাকার ক্ষতি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষায় দেখা যায়, দরপত্র আহ্বান না করেই ভিক্টর ট্রেডিং করপোরেশনকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রোগীদের খাদ্য সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়।

দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে মালামালের পারফরম্যান্স সিকিউরিটি বাবদ (নিশ্চয়তা) মোট মূল্যের ১০ শতাংশ জামানত নেওয়া হয়নি। এমনকি সরবরাহ করা মালামাল তিন সদস্যের সার্ভে (তদারকি) কমিটি বুঝে নেয়নি। এভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরাসরি ঠিকাদার থেকে মালামাল গ্রহণ করে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করে। একইভাবে দরপত্র, সার্ভে কমিটির অনুমোদন এবং নিশ্চয়তা জামানত ছাড়াই ২০২০-২১ অর্থবছরেও ৪২ লাখ টাকার কিছু বেশি পরিমাণ টাকা বিল হিসেবে তুলে নেওয়া হয়।

ভিক্টর ট্রেডিং থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে রোগ পরীক্ষার (প্যাথলজি) যন্ত্র কেনা হয়। নিরীক্ষায় ধরা পড়ে, বাজারমূল্যের চেয়ে ৬৯ লাখ টাকা বেশি দরে এসব যন্ত্র কেনা হয়েছে। নাক কান গলা ইনস্টিটিউটে এসি, নন-এসি এবং পেয়িং বেডে যতসংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছিলেন, তার বিপরীতে যে পরিমাণ টাকা বিল হিসেবে পাওয়ার কথা ছিল, তার চেয়ে পাঁচ লাখ টাকা কম জমা হয়েছে।

নিরীক্ষায় আরও দেখা যায়, অস্ত্রোপচার ও রোগ পরীক্ষার কিছু ভারী যন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে দরপত্রে শর্ত ছিল চারজনকে বিদেশে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এর জন্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু কাউকে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য না পাঠিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পুরো বিল পরিশোধ করা হয়।