সন্তানের পায়ে পলিথিন পুড়িয়ে ক্ষত করার অভিযোগে গ্রেপ্তার সেই নারী

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

বেশি ভিক্ষা পেতে ১১ বছরের শিশুর পায়ে পলিথিন পুড়িয়ে ক্ষত করার অভিযোগে করা মামলায় ওই শিশুর মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ওই নারীর নাম হোসনে আরা। আজ সোমবার রাঙামাটি সদর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো।

শিশুকে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগের অপরাধে শিশু আইন ২০১৩–এর ৭১ ধারায় চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় গত বছরের ১৯ নভেম্বর মামলাটি করেন ওই থানার উপপরিদর্শক নুরুল আলম।  এর আগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রাম-৭–এর বিচারক ফেরদৌস আরা পাঁচলাইশ থানা-পুলিশকে শিশুটির মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে পিবিআইয়ের একজন পরিদর্শককে দিয়ে তদন্তের জন্য বলেন।

এখন মামলাটির তদন্ত করছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো পরিদর্শক মর্জিনা আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে খবর পেয়ে রাঙামাটি থেকে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

গত বছরের ২৭ এপ্রিল হোসনে আরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭–এ শিশুটিকে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন। এতে বলা হয়, নগরের পাঁচলাইশ বদনাশাহ মাজারের সামনে থেকে তাঁর মেয়েকে মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে আসামি করা হয় মেয়েটি যে বাসায় কাজ করত, সেই বাসার রাশেদুল আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা আলী চৌধুরীকে। মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

এরপর মেয়েটি গত বছরের ১ জুন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের খাস কামরায় দুই পৃষ্ঠার জবানবন্দি দিয়েছে। আদালত সূত্র বলছে, মেয়েটি বলেছে, নগরের প্রবর্তক মোড় বদনা শাহ মাজার গেটে সে মায়ের সঙ্গে ভিক্ষা করত। বেশি ভিক্ষা পেতে হোসনে আরা বেগম মেয়েটির পায়ে পলিথিন পেঁচিয়ে পুড়িয়ে ক্ষত করে দিতেন। আর ভিক্ষার টাকায় তিনি ছক্কা (লুডু) খেলতেন। ছোট ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য হোসনে আরা বেগম গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মেয়েটিকে একটি বাসায় কাজে দেন। পরে আবার তাকে ভিক্ষা করার জন্য নিয়ে আসতে চান। কিন্তু মেয়েটি মায়ের কাছে যেতে চায়নি।

তদন্ত শেষে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জাহেদুজ্জামান চৌধুরী আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন গত সেপ্টেম্বর মাসে। এতে বলা হয়, শিশুটিকে অপহরণের অভিযোগ করা হলেও ঘটনাস্থলের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় দেখা যায়, শিশুটিকে  ওই দম্পতির কাছে তুলে দেন হোসনে আরা বেগম। এ কারণে ওই দম্পতি জড়িত নন।

গত  বছরের ২২ অক্টোবর প্রথম আলোর অনলাইনে ‘বেশি ভিক্ষা পেতে মেয়ের পায়ে পলিথিন বেঁধে পুড়িয়ে দিতেন তিনি: পিবিআই’ শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর আদালত পাঁচলাইশ থানা-পুলিশকে হোসনে আরার বিরুদ্ধে শিশুকে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগ করায় মামলা করতে নির্দেশ দেন।

১১ বছর বয়সী শিশুটি  বর্তমানে চট্টগ্রামের ফরহাদাবাদে মহিলা ও শিশু কিশোরী নিরাপদ হেফাজতিদের আবাসনকেন্দ্রে (সেফ হোম) রয়েছে।