সড়ক পরিবহন আইনে চালককে আসামি করে মামলা

গাড়ির বাম্পারে কাপড় জড়িয়ে আটকা পড়া রুবিনা আক্তারকে টেনে নিয়ে যান চালকছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চাকরিচ্যুত শিক্ষকের প্রাইভেট কারে টেনে নেওয়া রুবিনা আক্তারের মৃত্যুর ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে রুবিনা আক্তারের ভাই জাকির হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। সড়ক পরিবহন আইনে এ মামলা করা হয়েছে। রুবিনাকে গাড়ির নিচে টেনে নেওয়া গাড়ির চালক মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

শাহবাগ থানার এসআই (উপপরিদর্শক) শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, বেপরোয়াভাবে প্রাইভেটকার চালিয়ে রুবিনা আক্তারকে মেরে ফেলার ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে মামলা হয়েছে। তবে ঘাতক চালক মোহাম্মদ আজহার জাফর শাহের চিকিৎসা চলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে দেবর নুরুল আমিনের সঙ্গে মোটরসাইকেলে রুবিনা আক্তার (৪৫) রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাসা থেকে হাজারীবাগে বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বিপরীতে টিএসসি অভিমুখী সড়কে একটি প্রাইভেট কার পেছন থেকে তাঁদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে নুরুল আমিন মোটরসাইকেলসহ এক পাশে ছিটকে পড়েন। রুবিনা গাড়ির নিচে চাপা পড়েন। এ সময় গাড়ির বাম্পারে তাঁর পোশাক আটকে যায়। চালক গাড়ির নিচে আটকে যাওয়া রুবিনাকে নিয়ে বেপরোয়া গতিতে টিএসসি হয়ে নীলক্ষেতের দিকে যান। নীলক্ষেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তোরণের কাছে গাড়িটি আটকে রুবিনাকে জীবিত উদ্ধার করেন পথচারীরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।

আরও পড়ুন
নিহত রুবিনা আক্তার
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন

পথচারীরা যখন রুবিনাকে উদ্ধার করেন, ততক্ষণে গাড়ির সঙ্গে তাঁর আটকে থাকা দেহটি টেনে চালক এক কিলোমিটারের বেশি পথ চলে গেছেন। এতে তাঁর শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। এ সময় টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত সড়কের কোথাও কোথাও তাঁর দেহের পড়ে থাকা অংশ দেখা যায়। নীলক্ষেত এলাকায় গাড়ির চালক আজহার জাফর শাহকে আটক করে মারধর করেন পথচারীরা। গাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চালক আজহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি চাকরিচ্যুত হন।

আরও পড়ুন
বোনের মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন ভাই জাকির হোসেন
ছবি:
আরও পড়ুন

রুবিনার দেবর নুরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, পেছন থেকে ধাক্কা দিলে রুবিনা গাড়িটির নিচে আটকে পড়েন। ওই অবস্থাতেই গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে সামনে ছুটে চলে। গাড়ির পেছনে ছুটতে থাকেন তিনি। দেখেন গাড়ির বাঁ পাশের সামনের ও পেছনের চাকার মাঝখানে রুবিনা আটকে আছেন। নীলক্ষেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গেট থেকে একটু সামনে পলাশী অভিমুখী সড়কে পথচারীরা গাড়িটি আটক করেন।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের একটি দল ও পথচারীরা গাড়ির চালক আজহারকে ধাওয়া দিয়ে আটক করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁকে মারধর করেন। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে বছরে সাত থেকে নয় হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মারা যান।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় চলতি বছরের ১১ মাসে (জানুয়ারি-নভেম্বর) ৬ হাজার ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।