পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খুনের মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার দাবি

পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খান
ফাইল ছবি

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান খুনের চার বছর আট মাসেও বিচার শেষ না হওয়ায় হতাশ তাঁর পরিবার। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে এই কথা জানিয়েছেন মামলার বাদী ও মামুনের ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠাতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম খান আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই পুলিশের একজন কর্মকর্তা হলেও তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল খুনিরা। আমি বিচার চেয়ে মামলাও করেছিলাম। কিন্তু এত বছরেও বিচার এগোয়নি। সরকার যদি আমার ভাইয়ের খুনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়; তাহলে আমার পরিবার চিরদিন এই সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।’

পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যার অন্যতম আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান চার বছর আগে হত্যাকাণ্ডের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। প্রথমে ভারতে গিয়ে আরাভ খান নামে পাসপোর্ট নিয়ে দুবাইয়ে যান তিনি। সেখানে এখন বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন এই পলাতক আসামি। ১৫ মার্চ দুবাইয়ের নিউ গোল্ড সুকে জমকালো অনুষ্ঠানে আরাভ জুয়েলার্স নামে একটি গয়নার দোকানের উদ্বোধন করেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদনজগতের অনেক তারকাকে হাজির করে গণমাধ্যমের আলোচনায় উঠে আসেন আরাভ।

পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খুন হন ২০১৮ সালের ৮ জুলাই। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তাঁর আধপোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে পলাতক রবিউলসহ (আরাভ খান) ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে জাহাঙ্গীর আলমের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিল মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন আদালত।

আরও পড়ুন

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, রহমত উল্লাহর সঙ্গে অভিনয়ের সূত্র ধরেই পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খানের পরিচয়। এরপর বন্ধুত্ব। টেলিভিশনে দুজন ক্রাইম ফিকশন অনুষ্ঠানে অভিনয় করতেন। এই দুজনের সঙ্গে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী অভিনয় করত। ওই কিশোরী রহমত উল্লাহকে জন্মদিনের দাওয়াত দেয়। রহমত উল্লাহ তখন মামুনকেও ওই অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণ জানান। বনানীর ওই বাসার নিচে আসেন মামুন ও রহমত উল্লাহ। তখন ওই কিশোরী বাসার নিচে এসে দুজনকে বাসার ভেতরে নিয়ে যায়। বাসায় গিয়ে তাঁরা দেখেন, জন্মদিনের কোনো আয়োজনই নেই। মামুন ও রহমত উল্লাহকে খুনিরা বলেন, ‘তোরা কারা, এখানে কেন এসেছিস?’ তখন মামুন পুলিশ পরিচয় দিলে খুনিরা তাঁর ঘাড়ে আঘাত করেন। হাত-পা বেঁধে ফেলেন। রাত ১২টার দিকে খুনিরা বুঝতে পারেন, মামুন মারা গেছেন।

আরও পড়ুন

মামলাটিতে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছেন রবিউলের স্ত্রী সুরাইয়া। কারাগারে রয়েছেন আসামি রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দীদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১) ও সারোয়ার হোসেন (২৩)।

২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর এই মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপর ২০২২ সালের ২৮ জুলাই মামলায় একজন সাক্ষীকে হাজির করে রাষ্ট্রপক্ষ। আর কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। সেটি বর্তমানে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল সাত্তার দুলাল প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন