গ্রাহকদের ৪২১ কোটি টাকা আত্মসাৎ, আলেশা মার্টের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা

আলেশা মার্ট
ফাইল ছবি

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদারের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সম্প্রতি রাজধানীর বনানী থানায় এ মামলা করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (এসপি) আল মামুন।

প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সজীব দে।মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আলেশা মার্টের সহযোগী হিসেবে মঞ্জুর আলমের স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরীকেও আসামি করেছে সিআইডি। এ ছাড়া আসামির তালিকায় নাম রয়েছে আবুল কাশেম নামের এক ব্যক্তি এবং এস কে ট্রেডার্সের নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক আল মামুনের।

আলেশা মার্টের পক্ষে কম মূল্যে পণ্য কেনার প্রচারণা চালিয়েছে এস কে ট্রেডার্স। আর প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে ১০০ কোটি টাকা দিয়েছেন মঞ্জুর আলম। প্রস্তাবিত ব্যাংকটির পরিচালক হতে আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান এই টাকা দেন বলে জানান সিআইডির একাধিক কর্মকর্তা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে করা মামলায় আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য ইমিগ্রেশন পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

যেভাবে ‘প্রতারণার’ শুরু

২০২০ সালের ২৬ জুলাই আলেশা মার্ট যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। পরে প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইলেন্স নেয়। আনুষ্ঠানিকভাবে আলেশা মার্টের যাত্রা শুরু ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি।

যাত্রা শুরুর পর কম মূল্যে মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে বহু গ্রাহককে পণ্য না দিয়ে কিংবা টাকা ফেরত না দিয়ে ই-কমার্স ব্যবসার আড়ালে প্রতারণার মাধ্যমে তারা টাকা পাচার (মানি লন্ডারিং) করে বলে সিআইডির দাবি।

সিআইডি বলছে, চারটি বেসরকারি ব্যাংকে আলেশা মার্টের চারটি ব্যাংক হিসাব থেকে ৪২১ কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৩১ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ কেনা হয়েছে। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৫ আগস্টের মধ্যে এই সম্পদ কেনা হয়।

মঞ্জুরুল আলমের ২০২০-২০২১ অর্থবছরের আয়কর বিবরণীর তথ্য তুলে ধরে সিআইডি বলছে, বেতন ও আনুষঙ্গিক বেতন মিলে মঞ্জুরের আয় ছিল মাত্র ১৩ লাখ ৯০ হাজার। অথচ সাত মাসের ব্যবধানে তিনি ৩১ কোটি টাকার সম্পদ কেনেন।

মামলায় সিআইডির কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, গ্রাহকের টাকায় আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় প্রায় দুই হাজার শতক জমি কিনেছেন। যার আনুমানিক মূল্য দেখানো হয়েছে ২১ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সিআইডির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কম মূল্যে মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রির নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ আলেশা মার্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আলেশা হোল্ডিংস লিমিটেড, আলেশা টেক লিমিটেড, আলেশা এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট লিমিটেড, আলেশা কার্ড লিমিটেড, আলেশা রাইড লিমিটেড, আলেশা ফার্মেসি লিমিটেড, আলেশা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিস লিমিটেড, আলেশা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড ও আলেশা অ্যাগ্রো লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

‘বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে’

এর আগে গত বছরের ১৮ অক্টোবর চেক প্রতারণার অভিযোগের পৃথক দুই মামলায় মঞ্জুরুল আলমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।

গত বছরের ২৯ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে আলেশা মার্ট কাস্টমারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছিলেন, ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে মূল্য পরিশোধের গেটওয়েতে থাকা ৪২ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি ২৫৮ কোটি টাকা পাবেন গ্রাহকেরা।

প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের দেওয়া চেকের মেয়াদ অধিকাংশেরই শেষ। কিন্তু আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান চেক রিপ্লেস ও মূল টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেননি। এমনকি তাঁদের সব অফিস, কল সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ।

আরও পড়ুন

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের টাকায় মঞ্জুর আলমের সম্পদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয় জানতে চেয়ে আলেশা মার্টের চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়। তবে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন