‘এক কেজি ছিড়া আছিন, দুই দিন ধইর‍্যা তিনজনে মিইল্যা খাইতাছি’

ধর্মপাশা উপজেলা সদরের অনেক সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। শনিবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

‘ঘরে কোমরপানি। কেতা–বালিশ লইয়া শুক্রবার সহাল থাইক্যা বাড়ির হমনের পেরাইমারি স্কুলও পোলাপান লইয়া আশ্রয় নিছি। এইহানও রান্নাবান্নার কুনু ব্যবস্থা নাইগ্যা। ঘর এক কেজি ছিড়া আছিন। এই ছিড়া দুই দিন ধইর‍্যা তিনজনে মিইল্যা খাইতাছি। খালি আমরা না, এইরহম আরও অনেহেই আছে। অত কষ্টের মধ্য থাকলেও সরহার থাইক্যা অহওনও কুনু খাওন (ত্রাণসহায়তা) ফাইতাছি না। এই রহম চলতে থাকলে আমরারে না খাইয়া মরতে অইবো।’

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের সেলবরষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া বন্যার্ত দরিদ্র নারী জাহানারা বেগম (৫৫) ক্লান্ত গলায় কথাগুলো বলছিলেন।  কয়েক বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি।

আশ্রয়কেন্দ্রে তাঁর সঙ্গে রয়েছে ছেলে (১৪) ও মেয়ে (১০)। দরিদ্র এই নারীর বাড়ি উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের বীর দক্ষিণ পূর্বপাড়া গ্রামে। বিদ্যালয়টিতে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের ২৫টি পরিবার গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

আরও পড়ুন

বন্যার পানিতে ধর্মপাশা উপজেলার সবকটি গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া উপজেলার ধর্মপাশা-বাদশাগঞ্জ প্রধান সড়কের কয়েকটি স্থানে পানি উঠেছে। পানির ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী ও গবাদিপশু নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের বড়ইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার্ত ২০টি দরিদ্র পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এখনো সেখানে ত্রাণ সহায়তা না দেওয়া হয়নি। এসব দরিদ্র পরিবার খুব কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছে।’

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বন্যার পানি মানুষের ঘরবাড়িতে ঢুকে পড়ে। তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট। যতই সময় গড়াচ্ছে বন্যা ততই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে ৭ হাজার ৫৫০টি পরিবার রয়েছে।

আরও পড়ুন
সেলবরষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আশপাশে বন্যার্ত ২৫টি পরিবার
ছবি: প্রথম আলো

জয়শ্রী ইউনিয়নের বানারসীপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কদ্দুস (৪০) বলেন, ‘বন্যার কারণে গরুগুলারে নিয়া খুউব ভয়ে আছি। তিন দিন ধইর‍্যা আমরার গ্রাম ও আশপাশের গ্রামে কারেন্ট নাই। ‍খুউব কষ্টের মধ্যে দিন যাইতাছে।’

বন্যার্তদের জরুরিভিত্তিতে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও ত্রাণ সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের বাদশাগঞ্জ বাজারের বাসিন্দা আবদুস ছোবহান (৬৫) বলেন, ১৯৮৮ ও ২০০৪ সালের বন্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে এবারের বন্যা।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

বিদ্যুৎ নেই, ভরসার মোমবাতিরও সংকট

দেড় ঘণ্টার পানিতে তলিয়ে গেল সিলেট নগরের বাকিটুকুও

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি কেন এত নাজুক হলো?

আড়তে বন্যার পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের হাজার হাজার মণ ধান ভিজে নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলার মধ্যনগর বাজার ধান চাল আড়ৎদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জহিরুল হক। তিনি বলেন, অবিরাম বৃষ্টি মানুষের দুর্ভোগের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেষমেষ কী যে হয় তা আল্লাহই জানেন!

আরও পড়ুন

বন্যা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান।

তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে সরকারিভাবে ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও দুই লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। আরও সহায়তা চাওয়া হয়েছে। যে সহায়তা পাওয়া গেছে, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই বন্যার্ত মানুষজনের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হবে।’

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যার্ত পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনো খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও।