এখনো বিচ্ছিন্ন সুনামগঞ্জ, খাবার ও সুপেয় পানির জন্য হাহাকার

ঘরে বন্যার পানি। কোলে করে মাকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর শহরের শহীদ মিনার সড়কে গতকাল শনিবার
ছবি : প্রথম আলো

আজ রোববার বেলা ১টায় ৫৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। এখনো সারা দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন সুনামগঞ্জ। জেলার বিভিন্ন উপজেলার সড়ক ও বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে থাকলেও শহর থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।

তবে পানিবন্দী এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট। দ্রুত এর সমাধান করা না গেলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন।

বানভাসি মানুষ জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নদীর পানি উপচে তলাতে শুরু করেছিল জেলার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনকারী সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক। এখনো সড়কটি কয়েক হাত পানির নিচে। পুরো জেলা টানা তিন দিন ধরে বিদ্যুৎহীন। মুঠোফোন নেটওয়ার্ক অকার্যকর, বন্ধ ইন্টারনেট সেবাও। পুরো শহরেই পানি ঢুকেছে। প্রতিটি বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। হাঁটু থেকে গলাসমান পানি।

মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনসহ স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে জেলার কিছু জায়গায় মুঠোফোনে মাঝেমধ্যে কথা বলা যাচ্ছে এবং খুদে বার্তাও পাঠানো যাচ্ছে। এভাবে খুদে বার্তা পাঠিয়ে প্রথম আলো সেখানকার তিন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভেতর পানি ঢুকে খাদ্যসামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য নষ্ট হয়েছে। পানির কারণে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। খাবারের মজুত শেষ হয়ে পড়েছে। নলকূপ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় এখন হাহাকার চলছে।

সুনামগঞ্জ শহরের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা শ্যামসুন্দর সরকার খুদে বার্তায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘হঠাৎ পানি এসে শহরে ঢুকেছে। ঘরে ঘরে পানি। সবাই ঘরবন্দী হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তবে এখন পানি কমতে শুরু করেছে। শহরের অনেকের খাবারের মজুত শেষ, পাওয়া যাচ্ছে না বিশুদ্ধ জলও। দুর্বিষহ দিন যাচ্ছে। করুণ ও অসহায় অবস্থায় আছে মানুষ।’

পুরোনো বাসস্টেশন এলাকায় থাকেন রুবেল মিয়া। তিনি খুদে বার্তায় কেবল এটুকুই লিখেছেন, ‘খুব বেশি ভালো নেই। বেঁচে যে আছি, এটাই বড় কথা।’

খুদে বার্তার মাধ্যমে কথা হয় জনতা ব্যাংকের সুনামগঞ্জ করপোরেট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক রঞ্জিত লাল সোমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সুপেয় পানির সংকট মানুষকে বেশি ভোগাচ্ছে। বন্যার কারণে অন্যান্য সমস্যা তো রয়েছেই। একই ব্যাংকের জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক রেবতী মোহন সরকারের সঙ্গে সকালে মুঠোফোনে কথা হয়। কল বারবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় কয়েক দফায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়। তিনি বলেন, রানীগঞ্জ বাজার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। আশপাশের গ্রামেও পানি।

গত শনিবার বিকেলে সুনামগঞ্জের স্থানীয় সংবাদকর্মী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী ফেসবুকে একটি ভিডিও আপলোড করেন। এতে দেখা গেছে, সুনামগঞ্জের সড়কগুলো হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে ডুবে আছে। সড়ক দিয়ে নৌকায় চলাচল করছে মানুষ। পানি থাকায় অধিকাংশ দোকান বন্ধ। কেউ কেউ ছাতা হাতে জরুরি প্রয়োজনে কোমরসমান পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে।

ভিডিওতে দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী কিছু কথাও বলেছেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আতঙ্কের খবর হচ্ছে, সুনামগঞ্জে ভয়াবহ খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। তীব্র খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমে ভয়াবহ হচ্ছে।’ এ সময় তিনি দেশের সহৃদয় মানুষকে খাবার, সুপেয় পানি, স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি নিয়ে সুনামগঞ্জে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সুনামগঞ্জের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন প্রশিক্ষণের জন্য কয়েক দিন আগে ঢাকায় যান। তিনি স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জেলার পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন। আজ দুপুরে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেছে প্রথম আলো। তিনি বলেন, এখন পানি কমতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুকনো খাবার ও রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ অব্যাহত রেখেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।