এবার আবাসিক হলের কক্ষ দখলে তালা দেওয়ার অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

হলের কক্ষ দখলে নিতে শিক্ষার্থীর বেডিংপত্র বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের ২২৮ নম্বর কক্ষের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হলগেটে তালা দেওয়ার রেশ এখনো কাটেনি। এরই মধ্যে এবার এক শিক্ষার্থীর বেডিংপত্র বের করে দিয়ে আবাসিক হলের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

আজ শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের ২২৮ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউর রহমান ওরফে রাথিক কক্ষ দখলে এই তালা লাগিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হল সূত্রে জানা গেছে, মাদার বখশ হলের ৩১৮ নম্বর কক্ষে ২০১৮ সাল থেকে থাকছেন সালমান আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ১৩ জুন হলের ২২৮ নম্বর কক্ষ খালি হয়। সেখানে সালমানের এক বড় ভাই ছিলেন। তাঁর লেখাপড়া শেষ হওয়াতে তিনি চলে যান। ওই ফাঁকা কক্ষে হল প্রশাসনকে আবেদন দিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ১৩ জুন ওঠেন সালমান। হলের কক্ষ ফাঁকা হওয়ার খবরে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শফিউর আজ বিকেলে সেখানে গিয়ে সালমানকে হুমকি ও অশ্লীল গালিগালাজ করে কক্ষ খালি করতে বলেন। সালমান বের না হলে সালমানের বেডিংপত্র বের করে দিয়ে কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। ওই কক্ষে টাকাপয়সাসহ অন্য জিনিসপত্রের নিরাপত্তায় সালমানও আরেকটি তালা দিয়ে চলে আসেন। পরে তিনি ঘটনাটি হল প্রশাসনকে জানান। হলের প্রাধ্যক্ষ সন্ধ্যার আগে এসে তাঁদের নিয়ে আলোচনায় বসেন।

আরও পড়ুন

সালমান প্রথম আলোকে বলেন, ৩১৮ নম্বর কক্ষে পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছিল। তাই তিনি কক্ষ পরিবর্তন করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় হলের ২২৮ নম্বর কক্ষে উঠেছেন। এতে হল প্রশাসনের সম্মতি রয়েছে। ছাত্রলীগ কক্ষ খালি হলেই দখল করতে যায়। এর ধারাবাহিকতায় তিনিও ভুক্তভোগী। আজ বিকেলে ছাত্রলীগের শফিউর এসে তাঁর বেডিংপত্র বের করে দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন তাঁরা। এর অডিও রেকর্ডও তাঁর কাছে রয়েছে। কক্ষ থেকে বের না হওয়ায় তাঁকেসহ তালা লাগিয়ে দিতে চান। পরে তিনি বের হলে তাঁরা তালা লাগিয়ে দিয়ে চলে যান। কক্ষের ভেতরে টাকাপয়সা থাকায় নিরাপত্তায় তিনিও ওই কক্ষে তালা লাগিয়ে দিয়ে চলে আসেন।

আরও পড়ুন

অভিযোগের বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউর রহমান বলেন, তিনি ওই কক্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। তিনি সেখানে যাননি। তিনি শুনেছেন, ওখানে অন্য একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর বেডিংপত্র বের করে দিয়ে তালা দেওয়া হয়েছে। পরে সালমানও তালা দিয়েছেন। তিনি যেহেতু সেখানে যাননি, তাই কাউকে হুমকিও দেননি। এখানে ছাত্রলীগ জড়িত নয়।

হলে তালা না লাগালে প্রাধ্যক্ষ ডাকলেন কেন এই প্রশ্নে তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ উঠেছে। এটা যাচাই করার জন্যই প্রাধ্যক্ষ তাঁকে ডেকেছিলেন। এটা প্রাধ্যক্ষই সমাধান করবেন।

হল প্রাধ্যক্ষ মো. শামীম হোসেন বলেন, হলে তালা দেওয়ার খবরে তিনি গিয়ে আলোচনায় বসেন। সালমান দাবি করেছেন, তিনি হলের ৩১৮ থেকে ২২৮ নম্বর কক্ষে এসেছেন হল প্রশাসনকে জানিয়ে। হলের অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই ওই কক্ষে তালা খুলে হল প্রশাসন থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই কক্ষে আজ রাতে কেউ থাকতে পারবেন না। আগামীকাল রোববার সকালে এ নিয়ে আবার বসে সালমানের কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

হলে তালা লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, হল প্রশাসন ছাড়া কেউই নিজ কক্ষ ছাড়া অন্য কোনো কক্ষে তালা দিতে পারেন না। তাঁরা সেখানে দুটি তালা দেখেছেন। অভিযোগ ওঠা শফিউরও এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন জানিয়েছেন। কেন তালা লাগানো হলো, কে লাগালেন—এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে।

এর আগে গত ১৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগের সহসভাপতি শামীম ওসমান দুই দফা হলগেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ নিয়ে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছাত্রলীগ ও হল প্রশাসনের বৈঠক চলে। বৈঠকে বেরিয়ে আসে, শামীম হলের অবৈধ শিক্ষার্থী। তিনি অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও শফিউল্লাহ নামে আরেকজন অবৈধ শিক্ষার্থীকে তুলেছিলেন। শফিউল্লাহর বেডিংপত্র প্রাধ্যক্ষ নামিয়ে আনার জেরে তিনি হলগেটে তালা দিয়েছিলেন। পরে তাঁকে অপরাধ স্বীকার করে লিখিত দিতে বলা হয়। কিন্তু তিনি তা না দিয়ে বৈঠক ত্যাগ করেন। পরে হল প্রশাসন তাঁর বেডিংপত্রও নামিয়ে এনে অফিসকক্ষে রাখে। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে বলে হল প্রশাসন জানিয়েছে।

আরও পড়ুন

আবাসিক হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, সিট–বাণিজ্য, প্রাধ্যক্ষদের লাঞ্ছিত করার ঘটনাসহ তালা লাগানোর ঘটনা ঘটলেও এখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। আগামীকাল প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভায় এ নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।