কুষ্টিয়ায় রোগী উপচে পড়ছে করোনা ওয়ার্ডে, চাহিদা বাড়ছে অক্সিজেনের

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি অর্ধেকের বেশি রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। আজ রোববার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ছোট্ট শিশুটির নাম মুনতসির। বয়স মাত্র পাঁচ মাস। আজ রোববার করোনা শনাক্ত হওয়ায় ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। কিন্তু শয্যা খালি না পাওয়ায় ওয়ার্ডে ঠাঁই হয়নি। মেঝেতে মায়ের কোলে শুয়ে তার সময় কাটছে।

পাশের বিছানায় শুয়ে আছেন ৫৫ বছরের মাহবুব হোসেন। শ্বাস নিতে তাঁকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সহায়তা নিতে হচ্ছে। সেখানে চিকিৎসাধীন আরেক নারীর মুখেও অক্সিজেন মাস্ক। তবে সিলিন্ডারের অক্সিজেন শেষের দিকে। ছেলে ছুটছেন আরেকটি সিলিন্ডারের খোঁজে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইশোলসন ওয়ার্ডের চিত্র এটি। আজ বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত স্বাস্থবিধি মেনে হাসপাতালের তিনটি করোনা ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেল, তিনটি ওয়ার্ড রোগীতে টইটম্বুর। বেড ছাড়িয়ে মেঝেতে ঠাঁই হয়েছে ভর্তি হওয়া অনেক রোগীর।

হাসপাতালের তথ্য বলছে, ৩টি ওয়ার্ডে করোনা বেডের সংখ্যা ১০০টি। আজ দুপুর পর্যন্ত সেখানে ভর্তি আছেন ১২২ জন। তাঁদের মধ্যে পজিটিভ রোগী ৯৫ জন। বাকি ২৭ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন রোগী।

গতকাল শনিবার সকাল আটটা থেকে আজ সকাল আটটা পর্যন্ত এই হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি থাকা ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে; করোনাকালে এটিই জেলায় এক দিনে সবোর্চ্চ মৃত্যু। একই সময়ে জেলায় সর্বোচ্চ ১৬৪ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। যার বেশির ভাগ রোগী কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কুষ্টিয়া পৌর এলাকায়। যদিও গত ১০ দিন পৌর এলাকায় বিশেষ বিধিনিষেধ চলছে।

আইশোলন ওয়ার্ডে দায়িত্বে ছিলেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আক্রামুজ্জামান। তিনি বলেন, রোগী হু হু করে বাড়ছে। এটা অশনিসংকেত। রোগীদের সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা অর্ধেক রোগীর ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্টের দরকার হচ্ছে বেশি। হাসপাতালে ৩৪৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ১২০টি সিলিন্ডার রিফিল করতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

করোনা ওয়ার্ডে গত ৪০০ দিনের অধিক সময় ধরে স্বেচ্ছায় কাজ করছেন জেলা ছাত্রলীগের একঝাঁক কর্মী। নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ। আজ দুপুরে তাঁকে কয়েকজন কর্মী নিয়ে রোগীদের কাছে গিয়ে অক্সিজেন নিয়ে ছোটাছুটি করতে দেখা গেল।

ছাত্রলীগ নেতা শেখ হাফিজ বলেন, অক্সিজেন সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সবোর্চ্চ চেষ্টা চলছে। দুপুরে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাংসদ ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ৫০টি সিলিন্ডার হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। সেগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছে।

করোনায় আক্রান্ত রোগীর জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আজ রোববার দুপুরে  কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে করোনা রোগী ভর্তির হার বেড়ে যাওয়ায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেট করতে ও পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক এবং ওষুধ সরমঞ্জাদি দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, ‘কালকের (সোমবার) মধ্যে করোনা ডেডিকেটেট ঘোষণা করা হবে। উপজেলা থেকে ১০ জন চিকিৎসককে জেনারেল হাসপাতালে আনা হচ্ছে। ভর্তি থাকা অন্য রোগীদের শহরের দুটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে।’
বিধিনিষেধ চলার পরও করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এই পরিস্থিতি শুরুর আগে ২ জুন জেলার সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় জেলাজুড়ে এক বা দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করেছিলেন। তবে সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি।

সিভিল সার্জন আনোয়ারুল ইসলাম আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেদিনের কথা মানা হলে হয়তো আজ এই পরিস্থিতিতে না–ও আসতে পারত। তারপর এখনো সময় আছে সবাইকে পরিস্থিতি মেনে নিয়ে ঘরে থাকতে হবে।’ সিভিল সার্জন বলেন, পুরো জেলাজুড়ে গ্রামে গ্রামে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের অর্ধেকই গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা আগে থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। করোনা ছড়ানোর প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, এটা ভারতীয় ডেলটা ভেরিয়েন্ট। তাই সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

আরও পড়ুন