জীবনের সঙ্গে ৮০ হাজার টাকা, স্বর্ণের আংটি-চেইনও হারালেন রিপন

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রিপন খানের স্ত্রী ও দুই সন্তানকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনেরা। আজ সোমবার বিকেলে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর রূপনগরে মাছের ব্যবসা করতেন রিপন খান (৩৮)। সেখানে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন। পাশাপাশি গ্রামে করছিলেন নতুন বাড়ি। সেই বাড়ির বাকি কাজ শেষ করতে গত শনিবার ৮০ হাজার টাকা নিয়ে রওনা হয়েছিলেন গ্রামের পথে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাড়ি পৌঁছাতে পারেননি তিনি। পথে সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাঁর প্রাণ।

গত রোববার ভোরে বরিশালের উজিরপুরে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বামরাইল এলাকায় দুর্ঘটনায় নিহত ১০ জনের একজন রিপন খান। তিনি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মৃত করিম খানের একমাত্র ছেলে। আজ সোমবার সকাল ১০টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে রিপন খানের লাশ দাফন করা হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, রিপন খান ১৫ বছর ধরে রাজধানীতে মাছের ব্যবসা করতেন। ব্যবসা করে সংসারে সচ্ছলতা এসেছিল। বসতবাড়ি ছাড়া রিপনের কোনো জমি নেই। টাকা জমিয়ে বাড়িতে পাকা ঘর করেছেন। কিন্তু ঘরের কাজ তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। দুর্ঘটনার পর রিপন খানের হাতের স্বর্ণের আংটি, গলার চেইন ও নগদ ৮০ হাজার টাকা পাওয়া যায়নি। দুটি মুঠোফোনের একটি পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন

রিপন খানের স্ত্রী লাভলী বেগম জানান, নতুন ঘরের মেঝে ও ভেতরের দেয়ালের কিছু কাজ বাকি ছিল। এ জন্য জমানো ৮০ হাজার টাকা নিয়ে শনিবার রাতে ঢাকা থেকে বাড়িতে যাচ্ছিলেন। ওই টাকা দিয়ে ঘরের বাকি কাজ শেষ করার ইচ্ছা ছিল। রাত একটার সময় মুঠোফোনে রিপনের সঙ্গে স্ত্রী লাভলী বেগমের সর্বশেষ কথা হয়। রিপন তখন জানিয়েছিলেন, বাড়িতে পৌঁছে ফোন করবেন। কিন্তু পরদিন রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত স্বামীর ফোন পাননি লাভলী বেগম। রিপনের মুঠোফোনে কল করলে সেটিও বন্ধ পান।

এরপর লাভলী বেগম গ্রামের বাড়িতে রিপনের বোন রেহেনা বেগমকে ফোন করেন। রেহেনা জানান, রিপন বাড়িতে যাননি। পরে তাঁরা সড়ক দুর্ঘটনার খবর পান। বিকেল পাঁচটার দিকে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে রেহেনা বেগম ও তাঁর স্বামী খলিল হাওলাদার রিপন খানের লাশ শনাক্ত করেন। রাত সাড়ে ১২টায় তাঁরা লাশ নিয়ে বাড়ি পৌঁছান। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে লাভলী বেগম দুই সন্তানকে নিয়ে ওই রাতে বাড়িতে পৌঁছান।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রিপন খানের মেয়ে রিতা আক্তার (১৮) এইচএসসি পাস করেছেন। ছেলে রিফাত খান (৮) একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে।

আরও পড়ুন

প্রতিবেশী পারভেজ খান বলেন, রিপন খান ব্যবসা করে যা পুঁজি করেছিলেন, সব ঘর তৈরিতে ব্যয় করেন। রিপন খানের মৃত্যুর পর তাঁর মাছের ব্যবসা দেখাশোনার মতো কেউ নেই। দুটি সন্তান নিয়ে লাভলী বেগমের পক্ষে সংসারের হাল ধরা কষ্টসাধ্য হবে।

গত শনিবার যমুনা পরিবহনের বাসটি ঢাকা থেকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় যাচ্ছিল। পথে চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। রোববার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে উজিরপুর উপজেলার বামরাইলের আইয়ুব আলী হাওলাদারের বাড়ির সামনে পৌঁছালে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে মেহগনিগাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ১০ জন। রিপন খান ছাড়াও দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন একই উপজেলার ভেচকী গ্রামের নজরুল ইসলাম আকন (৩৬) ও তাঁর ছোট ভাই নবী হোসেন আকনের স্ত্রী জাহানারা বেগম (২৩)।

আরও পড়ুন