নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পাঠদান বন্ধ ৭৪৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। আজ শনিবার সকাল থেকে ভারী বর্ষণ হওয়ায় পানিতে জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এরই মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলার প্রায় ৯২ শতাংশ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা শহরের সঙ্গে কমলাকান্দা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় বন্যার পানি ওঠায় জেলায় অন্তত ৭৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৪০টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় শতাধিক।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং জেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে সদর ও কেন্দুয়া ছাড়া জেলার বাকি আটটি উপজেলায় আকস্মিক বন্যা শুরু হয়। এর মধ্যে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরি উপজেলায় অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িসহ সরকারি-বেসরকারি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকেছে। উপজেলাগুলোয় প্রায় ছয় লাখের মতো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
বেশির ভাগ ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোনা সড়কের আশারানী, বাহাদুরকান্দাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ডুবে যাওয়ায় কমলাকান্দার সঙ্গে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
রাস্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পানি ওঠায় বাধ্য হয়েই পাঠদান বন্ধ রাখতে হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নেত্রকোনার খালিয়াজুরি, মদন, মোহনগঞ্জ ও কলমাকান্দা উপজেলার একটা অংশে হাওর রয়েছে। এসব এলাকায় বর্ষা মৌসুমে এমনিতেই ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হয় শিক্ষার্থীদের। বন্যার কারণে ঝুঁকি আরও বেড়েছে। চারদিকে এখন শুধু পানি আর পানি।
কলমাকান্দা উপজেলার খলা ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিভূতি ভূষণ নাগ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলমাকান্দা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৩৪৩টি গ্রামে এখন বন্যার পানি। আমাদের বিদ্যালয়টিতে পানি না ঢুকলেও চারদিকে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ডুবে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে পাঠদান বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’
বিভূতি ভূষণ নাগ আরও বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠানে ঘোষণা দিয়েই পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে। আবার অনেক বিদ্যালয়ে ঘোষণা না দিলেও বন্যার কারণে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
কলমাকান্দার কৈলাটি ইউনিয়নের ঘনিচা গ্রামের বাসিন্দা তারা মিয়া তালুকদার বলেন, মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না, পানিবন্দী হয়ে আছেন। স্কুলও ডুবে আছে। এ অবস্থায় বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর প্রশ্নই আসে না।
পানি বাড়ার কারণে আরও অনেক এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ। তিনি বলেন, বন্যায় ৫৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যে বিদ্যালয়গুলোয় এখনো পানি ঢোকেনি, সেগুলোকে প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মো. ওবায়দুল্লাহ আরও বলেন, আটপাড়া উপজেলায় ৩০টি, বারহাট্টায় ৮৩টি, কলমাকান্দায় ১৭২টি, খালিয়াজুরিতে ৬৩টি, মদনে ৪১টি, মোহনগঞ্জে ৮৯টি, দুর্গাপুরে ৫০টি ও পূর্বধলায় ১২টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
জেলায় বন্যার্তদের জন্য খোলা ১৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬ হাজার ৪৮০ জন ঠাঁই নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
তিনি বলেন, বন্যাকবলিত প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোলরুম খোলাসহ মেডিকেল টিম নিয়োজিত করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন এনজিও, স্বেচ্ছাসেবীসহ প্রশাসনের লোকজন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৬০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অঞ্জনা খান মজলিশ আরও বলেন, অসংখ্য মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ডুবে যাচ্ছে। জেলার সঙ্গে কলমাকান্দার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।