বউকে ঘরে তোলা হলো না আজিজের

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আবদুল আজিজ মোল্লা
ছবি: সংগৃহীত

এক বছর আগে মো. আবদুল আজিজ মোল্লা বিয়ে করেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার নওগাঁ গ্রামের শোভা আক্তারকে। এত দিন চাকরি জোটেনি। তাই বউকে ঘরে তোলা হয়নি আজিজের। মাসখানেক আগে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে ১৮ হাজার টাকা বেতনে চাকরি হয় তাঁর। এর পর থেকে বউকে তুলে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।

এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গাজীপুরের বাইমাইল এলাকায় মারা যান কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার গুনাইঘর পশ্চিমপাড়া মোল্লাবাড়ির বাসিন্দা আজিজ। আজ বুধবার সকাল ৮টায় জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। দাফনে বন্ধু-স্বজন, সহপাঠী ও এলাকার মানুষ অংশ নেন।

বড় সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় পরিবারের সদস্যরা। কোনো সান্ত্বনা দিয়েও স্বজনদের শান্ত করা যাচ্ছে না। আজ সকালে বড় ভাইয়ের জানাজায় অংশ নেন মেজ ভাই আশিকুর রহমান মোল্লা। এরপর বেলা একটায় স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিতে চলে যান কুমিল্লায়। গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোকবল হোসেন মুকুল বলেন, পরিবারের সদস্যরা বড় ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায়।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেবীদ্বার উপজেলার গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়নের গুনাইঘর পশ্চিমপাড়া মোল্লাবাড়ির মো. বাসির হোসেন মোল্লা ও রাহিমা বেগমের তিন ছেলে। বড় ছেলে নিহত আবদুল আজিজ মোল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। মেজ ছেলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইসলামি শিক্ষা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান মোল্লা ও ছোট ছেলে আরিফ হোসেন মোল্লা কোরআনে হাফেজ হতে পড়ালেখা করছেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, আজিজের জন্ম ১৯৯৫ সালে। গুনাইঘর আলিম মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছিলেন আবদুল আজিজ। গত মাসের ২৫ জানুয়ারি একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি পান আজিজ। এরপর ট্রাভেল এজেন্সি কর্তৃপক্ষ তাঁকে বিভিন্ন অফিস পরিদর্শনের জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছিল। গাজীপুরে মঙ্গলবার বেলা দুইটায় মোটরসাইকেল থেকে পড়েই মারা যান আজিজ ও তাঁর সহকর্মী। মঙ্গলবার রাতেই বাড়িতে লাশ আনার পর কান্নার রোল পড়ে। খবর পেয়ে আজিজের সহধর্মিণী শোভা আক্তারও স্বামীর লাশ দেখতে আসেন।

আজিজের বাবা মো. বাসির হোসেন মোল্লা বলেন, ‘আমি গুনাইঘর মাদ্রাসার অফিস সহকারী। এই চাকরি দিয়ে পরিবার চালাচ্ছি টেনেটুনে। আজিজ আমার বড় ছেলে। এক বছর আগে বিয়ে করেছিল। এখনো বউকে ঘরে তোলা হয়নি। চাকরি পাওয়ার পর বউ তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল আজিজ। আমরাও প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু বধূবেশে বউকে বাড়ি আনতে পারল না ছেলেটি। বউ স্বামীকে দেখতে পেল লাশ হিসেবে। কী বলব তাঁকে? কেমন করে সইবে মেয়েটি। বাবার কাঁধে ছেলের লাশ, এটা সহ্য করতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার রাতে আমার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় আজিজের। বলেছিল, বাবা নতুন চাকরিতে বেতন ১৮ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে আগের মাসের কয়েক দিনের বেতন-ভাতা বাবদ ৬ হাজার টাকা পেয়েছে। কে জানত, এটাই ছিল ছেলের সঙ্গে শেষ কথা।’

আজিজের মা রাহিমা বেগম বড় ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। তিনি বারবার মূর্ছা যান। বিলাপ করতে করতে বলেন,‘আমার আজিজকে এনে দাও।’

শোকের মাতমের মধ্যে আজিজের স্ত্রী শোভা আক্তার ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। কোনো কথাই বলছেন না। শুধু ছলছল চোখে জল অনুচ্চারিত অনুভূতি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন