ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রামের পথে আরও ১০০৬ রোহিঙ্গা

কক্সবাজারের উখিয়া থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রামের পথে রোহিঙ্গাদের গাড়ির বহর। আজ বুধবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের উখিয়া থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রামে রওনা হয়েছে আরও এক হাজার ছয়জন রোহিঙ্গা। আজ বুধবার বেলা সোয়া একটার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রথম দফায় রোহিঙ্গাদের বাসের বহর চট্টগ্রামে নিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাতেই তাদের চট্টগ্রামে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এ ছাড়া বিকেলে দ্বিতীয় দফায় আরও পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রামে পাঠানো হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে তাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে।

এর আগে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবির থেকে ২১ হাজার ৫০৫ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। এ নিয়ে মোট ২২ হাজার ৫১১ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানো হলো। ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর কার্যক্রম পরিচালনা করছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ (এপিবিএন) বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)।

১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার নাঈমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়শিবির থেকে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের গাড়িতে তুলে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আনা হয়। সেখানে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তাদের দুপুরের খাবার খাওয়ানো হয়। পরে বেলা সোয়া একটার দিকে প্রথম দফায় এক হাজার ছয়জন রোহিঙ্গাকে ১৯টি বাসে তুলে চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে। বিকেলে দ্বিতীয় দফায় আরও পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গাকে একাধিক বাসে চট্টগ্রামে পাঠানো হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাদের নৌবাহিনীর জাহাজে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে উখিয়ার বিভিন্ন শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের বাস ও ট্রাকে তুলে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আনা হয়। বেলা একটার সময় খাবার খাওয়ানোর পরে তাদের বাসে ওঠানো হয়। শরণার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

কয়েক মাস আগে তাঁর অনেক নিকটাত্মীয় ভাসানচরে স্থানান্তর হয়েছেন। সবাই বলছেন, কক্সবাজারের তুলনায় ভাসানচরের আশ্রয়শিবির অনেক উন্নত ও নিরাপদ। তাই মা ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভাসানচরে যাচ্ছেন তিনি
সলেমা খাতুন (৪৫), রোহিঙ্গা শরণার্থী

উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্প ছেড়ে স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে ভাসানচরে যাচ্ছেন রোহিঙ্গা সাইফুল করিম (৪৫)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উখিয়া শিবিরে সব সময় খুন-খারাবি, অপহরণ লেগেই আছে। সন্ত্রাসীরা যখন তখন সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে। এ জন্য আমরা ভাসানচরে যাচ্ছি।’ মধুরছড়া ক্যাম্প থেকে ভাসারচরে যাচ্ছেন সলেমা খাতুন (৪৫)। তাঁর সঙ্গী মা ও চার ছেলেমেয়ে। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে তাঁর অনেক নিকটাত্মীয় ভাসানচরে স্থানান্তর হয়েছেন। সবাই বলছেন, কক্সবাজারের তুলনায় ভাসানচরের আশ্রয়শিবির অনেক উন্নত ও নিরাপদ। তাই মা ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভাসানচরে যাচ্ছেন তিনি।

আরও কয়েকজন রোহিঙ্গা বলেন, বর্ষায় সময় উখিয়ার লিম্বাশিয়া, জুমছড়ি, মধুরছড়া, বালুখালী শিবিরে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। উঁচু পাহাড়ের ঢালুতে তাদের বসতি হওয়ায় বর্ষায় আতঙ্কে থাকতে হয়। এ ছাড়া ঘনবসতির কারণে শীতকালে অগ্নিকাণ্ডের আতঙ্ক তো রয়েছেই। ভাসানচরে এসব ঝুঁকি নেই। ভাসানচর অনেক নিরাপদ। সেখানকার থাকার ঘরগুলোও উন্নত। তাই তারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে চলে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

আরআরআরসি কার্যালয় তথ্য বলছে, এর আগে গত ৫ জানুয়ারি কক্সবাজার থেকে ৭০৫ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। আগামী কয়েক মাসে আরও ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গারা নৃশংসতার শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। কয়েক মাসে অন্তত আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।

আরও পড়ুন

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই জায়গায় এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন