সেনাবাহিনীর উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে বাঁধ পুনর্নির্মাণ, পাউবোকে হস্তান্তর

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার ১১টি স্থানের বাঁধ পুনর্নির্মাণ করে পাউবোর কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভেঙে যাওয়া প্রায় ১১ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে হস্তান্তর করেছে সেনাবাহিনী।

আজ সোমবার দুপুরে খুলনার কয়রা উপজেলার ডাকবাংলো চত্বরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রকল্পটি পাউবোর কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিজেদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে সেনাবাহিনী বাঁধ পুনর্নির্মাণ করেছে। এ জন্য বাঁধ বেশি টেকসই হবে বলে মনে করেন সেনা কর্মকর্তারা।

২০২০ সালের ২০ মে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। সিডরের পর এটাই ছিল দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ও ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন ওই ঘূর্ণিঝড় দেশের ২৬টি জেলায় তাণ্ডব চালায়। প্রায় ২৬ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুই লাখের বেশি বাড়িঘর।

আরও পড়ুন

আম্পানে খুলনার কয়রা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনির বিভিন্ন এলাকার নদীর বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। এর মধ্যে তিন উপজেলার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ১১টি এলাকার ভেঙে যাওয়া বাঁধ পুনর্নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় সেনাবাহিনীকে। সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশন ওই প্রকল্পের কাজ করে। প্রকল্পের আওতায় ১১টি স্থানে মোট ১০ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার বাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হয়। ওই কাজে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪২ কোটি টাকা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোল্লা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পাউবোর দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম তাহমিদুল ইসলামের কাছে প্রকল্পটি হস্তান্তর করেন।

আরও পড়ুন

অনুষ্ঠানে মোল্লা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, পাউবোর অনুরোধে ওই তিন এলাকার বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ করে সেনাবাহিনী। কাজের জন্য কয়রা ও সাতক্ষীরায় দুটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। কাজ চলাকালে ২০২১ সালের আগস্টে ভারী বৃষ্টির কারণে নির্মাণকাজ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে সেনাবাহিনীর সার্বিক নির্দেশনা, তদারকি ও ব্যবস্থাপনায় নিজস্ব উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে বাঁধ পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। সফলভাবে কাজ সম্পন্ন করায় সেনাবাহিনী নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে বলে তিনি মনে করেন।

পাউবোর প্রকৌশলী এ কে এম তাহমিদুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের নদীতে পোল্ডার তৈরির কাজ শুরু হয় ৬০–এর দশকে। এরপর ওই পোল্ডারগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। এ কারণে তা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল। জোয়ারে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি ও মাঝারি আকারের ঝড়ে বাঁধ ভেঙে যেত। এ জন্য এসব এলাকার মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে উপকূলীয় এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। জলবায়ু সহনশীল করে এসব বাঁধ তৈরি করা হবে। স্থায়িত্ব থাকবে কমপক্ষে ১০০ বছর। ২০২৪ সালের মধ্যে দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখা যাবে বলে তিনি জানান।

অনুষ্ঠানে প্রকল্পের পরিচালক ৩ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গাজী মাসুদ মো. মাহেনুর, দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং সেনা, পুলিশ ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।