টেকনাফের ওপারে টানা এক সপ্তাহ গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণ

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রাখাইন-রোহিঙ্গা সংঘাত চলছেই
ছবি: গুগল ম্যাপ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এক মাসের বেশি সময় ধরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) যুদ্ধ চলছে। এর মধ্যে টেকনাফ সীমান্তের ওপারে টানা এক সপ্তাহ ধরে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণ হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছয়টা থেকে আজ বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত রাখাইনের শহর মংডু শহরের উত্তরে কুমিরখালী, বলি বাজার, নাকফুরা, নাইচাডং, কোয়াচিডং, কেয়ারিপ্রাং, পেরাংপ্রুসহ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণ শোনা যায়। এর ফলে টেকনাফ পৌর শহর, সাবরাং, হ্নীলা, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন; নির্ঘুম রাত কাটছে তাঁদের।

আরও পড়ুন

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, আরাকান আর্মিকে লক্ষ্য করে কয়েক দিন ধরে আকাশ থেকে শক্তিশালী গ্রেনেড-বোমা, মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে সরকারি বাহিনী। স্থল থেকে পাল্টা গুলি ছুড়ে জবাব দিচ্ছে আরাকান আর্মি। স্থলপথে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর টহল সীমিত হয়ে পড়েছে। এ সুযোগে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নিতে অগ্রসর হচ্ছে।

তিন দিন বন্ধ থাকার পর ২৯ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে টেকনাফের বিপরীতে রাখাইনের বলি বাজার এলাকায় আবার গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণ হয়। এর পর থেকে গোলাগুলি চলছেই। গত কয়েক দিন টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তে অবস্থান করে দেখা, রাখাইনের টাউনশিপ মংডু এলাকায় বিমান হামলা বাড়িয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। আরাকান আর্মিকে লক্ষ্য করে আকাশ থেকে ছোড়া হচ্ছে শক্তিশালী গ্রেনেড-বোমা ও মর্টার শেল। তাতে রাখাইন রাজ্যসহ টেকনাফ সীমান্তের ২১টি গ্রাম কেঁপে উঠছে। গতকাল বেলা সাড়ে তিনটা থেকে টানা এক ঘণ্টা বিমান হামলা চালায় মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী। এ সময় হেলিকপ্টার ও উড়োজাহাজ থেকে শক্তিশালী বোমা ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করা হয়। তাতে লন্ডভন্ড হয় মংডু টাউনশিপের উত্তরের কয়েকটি গ্রাম। স্থল থেকে পাল্টাগুলি গুলি ছোড়ে আরাকান আর্মি।

টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য নিয়ে আসা মিয়ানমারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, গত কয়েক দিনের যুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিথুয়ের প্রবেশমুখ পোন্নাগিউন শহরটি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। গত সোমবার থেকে সেখানেও যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারে আরাকান আর্মির অবস্থানে হামলা চালাচ্ছে সরকারি বাহিনী। কঠিন যুদ্ধ সামলে সিথুয়ে টাউনশিপের দিকে অগ্রসর হচ্ছে সশস্ত্রগোষ্ঠীর লোকজন। তাতে সিথুয়ের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবসা–বাণিজ্য অচল হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন

গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়ার শঙ্কায় উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের ২১ গ্রামের অন্তত ৭ হাজার জেলে নাফ নদী ও সাগরে মাছ শিকারে নামতে পারছেন না। পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ সীমান্তের জমিতে চিংড়ি, কাঁকড়া ও ধান, শাকসবজি ও তরিতরকারির চাষ করতে পারছেন না। আয়রোজগার না থাকায় বহু পরিবার অর্ধাহারে–অনাহারে থাকছেন।

পালংখালী ও হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী ও রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, রাখাইনের চলমান যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত সীমান্তঘেঁষা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ১২ হাজার বাংলাদেশিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মতো রেশনিং ব্যবস্থায় নিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে। রাখাইনের যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।