একসঙ্গে দুই সন্তান হারিয়ে শোকে স্তব্ধ মা–বাবা
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে আল আমিন ফরাজী (৩৫) ও তাঁর বোন সালেহা বেগমের (৪৫) মৃত্যুর শোকে স্তব্ধ হয়ে আছে তাঁদের গ্রামের বাড়ি। ছেলে-মেয়েকে হারানোর আকস্মিকতায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন সিরাজুল ইসলাম ফরাজী ও তাঁর স্ত্রী আফিয়া বেগম।
শুক্রবার বেলা একটার দিকে ঢাকা-পেন্নাই-মতলব সড়কের কবিচন্দ্রদি শেখবাড়ির কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত ও অটোরিকশার চালকসহ অপর চার যাত্রী গুরুতর আহত হন।
নিহত আল আমিন ফরাজীর বাড়ি দাউদকান্দি উপজেলার কাউয়াদি গ্রামে। তিনি পোশাক কারাখানার শ্রমিক ছিলেন। এ দুর্ঘটনায় নিহত তাঁর বড় বোন সালেহা বেগম দাউদকান্দি উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত আনু মিয়ার স্ত্রী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় কাউয়াদি গ্রামে আল আমিন ফরাজীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আল আমিনের বাবা সিরাজ মিয়া ও মা আফিয়া বেগম স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন। যেন অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছেন তাঁরা।
কাঁদতে কাঁদতে আল আমিনের স্ত্রী শিউলী আক্তার বলেন, স্বামীকে হারিয়ে সব শেষ হয়ে গেছে তাঁর। এখন সংসার কে চালাবে আর দুই ছেলেকে কে দেখে রাখবে। শ্বশুরের হৃদ্রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যুরো বাংলাদেশ এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এই টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন, বুঝতে পারছেন না।
আল আমিনের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে জুনাইদ শূন্য দৃষ্টিতে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ভাই-বোনের মৃত্যুতে অঝোরে কেঁদে চলেছেন সিরাজুল ইসলামে অপর দুই মেয়ে সেলিনা আক্তার ও ঝরনা আক্তার। বাড়ির উঠানে প্রতিবেশীদের ভিড়। সান্ত্বনা দেওয়ারও ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা।
সিরাজ মিয়ার চাচাতো ভাই সেন্দু মিয়া ও প্রতিবেশী গৃহবধূ শিল্পী আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সিরাজ মিয়ার বসতঘর ছাড়া আর কোনো সম্পত্তি নেই। আল আমিনের আয়ে হৃদ্রোগ ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবার চিকিৎসা ও ওষুধ খরচ চলত। ছয় সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণের খরচও চালাতেন আল আমিন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে আল আমিনের বৃদ্ধ মা-বাবা ও স্ত্রী এখন দিশাহারা।
আল আমিন পরিশ্রমী ও শান্ত স্বভাবের ছিলেন জানিয়ে কাউয়াদি গ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, তাঁর অকালমৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে।
এদিকে এ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অটোরিকশার চালক ও তিনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শান্ত মিয়া।
তাঁর মা আকলিমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, শান্তর বাবা আহাদ মিয়ার বয়স হয়েছে। আগে দিনমজুর ছিলেন। এখন কাজ করতে পারেন না। একমাত্র ছেলের আয়ে শান্তর দুই বোনের লেখাপড়া চলত। এখন পরিবার কীভাবে চলবে, আর কে–ইবা শান্তর চিকিৎসার খরচ জোগাবেন—তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।
দাউদকান্দি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুদর্শন কান্তি দে প্রথম আলোকে বলেন, এ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিনজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।