সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের লাশ ৩ দিন পর ফেরত দিল ভারত

আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের শূন্যরেখা দিয়ে বিএসএফের গুলিতে নিহত আক্কাস আলীর লাশ ফেরত দেয় ভারতীয় পুলিশ
ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবক আক্কাস আলীর (৩৫) লাশ তিন দিন পর ফেরত দিয়েছে ভারত। আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের শূন্যরেখায় ভারতের ফাঁসিদেওয়া থানার পুলিশ তেঁতুলিয়া থানার পুলিশের হাতে লাশটি হস্তাস্তর করে।

লাশ হস্তান্তরের সময় সেখানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশর (বিজিবি) সদস্যরা ছাড়াও বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নিহত আক্কাস আলীর স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন। ভারতীয় পুলিশের কাছ থেকে লাশ পাওয়ার পরপরই নিহত আক্কাস আলীর বাবা আবদুস সামাদসহ স্বজনদের হাতে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তেঁতুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী।

আক্কাস আলী তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনই হাট ইউনিয়নের ধামনাগছ এলাকার আবদুস সামাদের ছেলে। তাঁর একটি ছেলে ও একটি মেয়েসন্তান আছে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে জেলার তেঁতুলিয়ার তিরনই হাট ইউনিয়নের ইসলামপুর সীমান্তের ওপারে ভারতীয় ভূখণ্ডে বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে তিনি নিহত হন। এরপর বুধবার সকালে লাশটি ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।

আরও পড়ুন

বুধবার সকালে ও বৃহস্পতিবার দুপুরে বিজিবির সঙ্গে দুইদফা পতাকা বৈঠকে ওই যুবকের মারা যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বিএসএফ। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ ফেরত দেওয়া হবে বলে জানায় বাহিনীটি।

তিরনই হাট ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রমজান আলী বলেন, লাশ বুঝে পাওয়ার পরপরই নিহত ব্যক্তির বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা তিনটায় ধামনাগছ এলাকায় পারিবারিক গোরস্তানে আক্কাস আলীর লাশ দাফন করা হয়েছে।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে আক্কাস আলীসহ কয়েকজন ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য কাঁটাতারের বেড়া কাটছিলেন। তখন বিএসএফের ফরিকগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি করলে আক্কাস ঘটনাস্থলে নিহত হন বলে জানা যায়। আক্কাসের সঙ্গে থাকা অন্যরা পালিয়ে এসে স্বজনদের খবর দিলে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি বিজিবিকে জানায়। তবে পতাকা বৈঠকে বিজিবিকে বিএসএফ জানায়, চোরাকারবারিদের একটি দল কাঁটাতারের বেড়া কাটার সময় বিএসএফ এগিয়ে গেলে চোরাকারবারিরা তাদের ওপর হামলা করে। আত্মরক্ষায় তারা গুলি চালালে একজন মারা যায়। পরে লাশ উদ্ধার করে ভারতীয় পুলিশের কাছে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত আক্কাস ভারতীয় গরুর ব্যবসা করতেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। বাবার এক বিঘা ভিটেবাড়ি ছাড়া অন্য কোনো জমি জমা নেই। ওই ভিটাতেই মা-বাবাসহ তিন ভাই বসবাস করেন।

নিহত ব্যক্তির স্ত্রী ফরিদা আক্তার বলেন, তাঁর স্বামী ভারতীয় গরুর ব্যবসা করতেন। কিন্তু তিনি ভারতে যেতেন না। অন্য লোকজন গরু নিয়ে আসতেন। ওই দিন তিনি কেন গিয়েছিলেন, বলতে পারছেন না। মঙ্গলবার এশার নামাজের আগে বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করে বের হন। এরপর আর ফেরেননি। লোকজনের কাছে শুনেছেন, গুলিতে তিনি মারা গেছেন। ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে তিনি এখন নিরুপায়।