শাজাহান খানের বাড়ি ও পেট্রলপাম্প পাহারা দেওয়া সেই যুবদল নেতার পদ স্থগিত
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বাড়ি ও তাঁর ভাইদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দিনভর পাহারা দেওয়ায় জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফারুক হোসেন ব্যাপারীর পদ স্থগিত করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে গত রোববার তাঁকে ৩ দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছিল।
বিএনপি ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে গত শনিবার মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ মিছিল ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গ্রুপে আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খানের বাড়ি ও তাঁর ভাইদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পরে মাদারীপুর শহরের চানমারি মসজিদের সামনে শাজাহান খানের দশতলা ভবনসহ তাঁর ভাইদের চারটি বাড়ি, আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পেট্রলপাম্পে কোনো ধরনের সহিংসতা যেন না হয়, সে জন্য যুবদলের আহ্বায়ক ফারুকের নেতৃত্বে অন্তত অর্ধশত কর্মী শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাহারা দেন। তাঁদের এ কার্যক্রমের একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ঘটনাটি গত রোববার কেন্দ্রীয় যুবদলের নজরে এলে তাৎক্ষণিকভাবে ফারুক হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সেই নোটিশে ৩ দিনের মধ্যে যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলামের সামনে উপস্থিত হয়ে তাঁকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। এরপর ব্যাখ্যা শুনে গত সোমবার রাতে তাঁর সব পদ স্থগিত করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া।
মাদারীপুর জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাজাহান খানের বাড়ি ও ভাইদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পাহারা দেওয়ার ঘটনায় জেলায় আহ্বায়কের পদটি কেন্দ্র থেকে স্থগিত করা হয়েছে। এখানে কেন্দ্রের বাইরে আমাদের কথা বলার সুযোগ নেই। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে বিধায় কেন্দ্র থেকে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। দল কখনোই ব্যক্তির অপকর্মের দায় গ্রহণ করবে না।’
জানতে চাইলে পদ স্থগিত হওয়া যুবদল নেতা ফারুক হোসেন ব্যাপারী গতকাল মঙ্গলবার রাতে বলেন, ‘আমি আগে একবার বহিষ্কৃত হয়েছিলাম, পরে যুবদলের আহ্বায়ক হয়েছি। এখন পদ গেছে, আবার জেলা বিএনপির সেক্রেটারি হব, থানা বিএনপির সভাপতি হব। আবার যুবদলেরও প্রেসিডেন্ট হব, ইনশা আল্লাহ। আমি পার্টি অফিসে (যুবদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়) আছি। আর এটা তো বহিষ্কার নয়, সাময়িক স্থগিত। এগুলো থাকে না।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংগঠিত একাধিক মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খান ও তাঁর ছেলে আসিবুর রহমান খান বর্তমানে কারাগারে। তাঁর ভাইয়েরাসহ পরিবারের অধিকাংশ লোক পলাতক থাকলেও মাদারীপুরে তাঁদের পরিবহন, আবাসিক হোটেল, পেট্রল পাম্পসহ সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল।