রাজশাহী মেডিকেল কলেজের একটি ছাত্রীনিবাসকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। তবু সেখানে বিদেশি ১৭ জনসহ প্রায় ১৫০ ছাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকছেন। মেডিকেল কলেজের তিনটি ছাত্রীনিবাসের মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো পলিন ছাত্রীনিবাস। ভবনটির তৃতীয় তলার ছাদ থেকে মাঝেমধ্যেই পলেস্তারা খসে পড়ে বিছানার ওপর। ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে, ফাটল দিয়ে বৃষ্টির পানি ঢুকে ভিজে যাচ্ছে আসবাব।
সম্প্রতি এক দুপুরে পলিন ছাত্রীনিবাস ঘুরে দেখা যায়, কয়েকজন ছাত্রী ভেজা তোশক ও কাপড়চোপড় ছাদে শুকাতে দিয়েছেন। বেশির ভাগ ছাত্রী ছুটিতে চলে যাওয়ায় হল ফাঁকা। তত্ত্বাবধায়ক ঈশিতা খানম সঙ্গে ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৯ নম্বর কক্ষের পুরো ছাদ থেকেই বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ে।’ কক্ষটি বন্ধ থাকায় দেখাতে পারেননি। তবে পাশের ২২ ও ২৭ নম্বর কক্ষে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে আছে। কোথাও নতুন প্লাস্টার ফেটে ঝুলে আছে।
এক ছাত্রী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে একটা বড় টুকরা খসে বিছানায় পড়ে। আমরা বাইরে থাকায় রক্ষা পাই।’ নামাজঘরের একাংশও পানি পড়ে ভিজে থাকে। হলের মাঝখানে ফাটা অংশ দেখিয়ে তত্ত্বাবধায়ক ঈশিতা খানম বলেন, ‘সেখান দিয়েও পানি পড়ে, সব ভিজে যায়।’
তত্ত্বাবধায়ক ঈশিতা খানম বলেন, ‘পিডব্লিউডির কর্মকর্তারা মৌখিকভাবে পলিন ছাত্রীনিবাসকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। লিখিত কিছু দেননি, তাই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বলতে পারি না। তবে বাস্তবে এই হলে থাকা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।’ তিনি জানান, এই ছাত্রীনিবাসে ১৫০ জনের আবাসিকতা আছে। দক্ষিণ পাশের বারান্দার পুরো প্লাস্টার খুলে পড়েছে। নতুন করে প্লাস্টার করা হলেও সেখানে আবার ফাটল ধরেছে।
পলিন ছাত্রীনিবাসের পাশেই ফাল্গুনী ছাত্রীনিবাস। বাইরে রং করা থাকলেও ভেতরে সংস্কার হয়নি। ঈশিতা খানম জানান, গত বছর মার্চে আগুনে বিদ্যুৎ লাইন নষ্ট হয়। ৩০ লাখ টাকার কাজ হলেও এখনো বিল পরিশোধ না হওয়ায় ঠিকাদার অসমাপ্ত রেখে চলে গেছেন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ লাইন এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় আগুন লাগতে পারে। কিছু কক্ষ স্যাঁতসেঁতে ও ড্যাম হয়ে গেছে, শিক্ষার্থীরা থাকতে চান না।’
২০০৬ সালে নির্মিত ছয়তলাবিশিষ্ট আয়েশা ছাত্রীনিবাসে ৩৫৪ জনের আবাসনের ব্যবস্থা আছে। তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘তিনতলা পর্যন্ত বাথরুমে কোনো টাইলস নেই। ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। নির্মাণের সময়ই টাইলস ছাড়া করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই।’
ফাল্গুনী ছাত্রীনিবাসের পাশেই ১০ তলা নতুন একটি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২৩ সালে। চারতলা পর্যন্ত গাঁথুনির পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। গণপূর্ত বিভাগ জানায়, প্রকল্পের জন্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যার মধ্যে ১০ কোটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে। মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছে, নির্মিত অংশ ব্যবহারের উপযোগী করে দিলে পলিন ছাত্রীনিবাসের শিক্ষার্থীদের সেখানে সরানো যাবে। তবে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।
রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম বলেন, প্রথম চারতলার অবশিষ্ট কাজ ও পঞ্চম থেকে সপ্তম তলা নির্মাণে প্রায় ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গত জানুয়ারিতে স্বাস্থ্য শিক্ষার মহাপরিচালক বরাবর আবেদন পাঠানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, এটি আগের সরকারের আমলের প্রকল্প। সরকার পরিবর্তনের কারণেই থেমে গেছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফয়সল আলম প্রথম আলোকে বলেন, পলিন ছাত্রীনিবাস সবচেয়ে পুরোনো। সেখানে ছাত্রীদের ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য হোস্টেলেও জায়গাসংকট আছে। তিনি আরও বলেন, নির্মাণাধীন ভবনের কাজ সময়মতো শেষ হলে সংকট থাকত না। এখন নতুন ভবনের অবশিষ্ট কাজ শেষ করাটা খুবই জরুরি।