বাঁকখালী নদীতে দৃষ্টিনন্দন সেতুর উদ্বোধন কাল, সম্ভাবনার নতুন স্বপ্ন স্থানীয়দের

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত ৫৯৬ মিটার দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন সেতু। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার শহরের পশ্চিম পাশে বাঁকখালী নদীর ওপর গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আগামীকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর উদ্বোধন করবেন। এরপর ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৯৬ মিটার দৈর্ঘ্যের দৃষ্টিনন্দন এই সেতু চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। মূলত কক্সবাজার শহর থেকে নদীর উত্তর পাড়ে খুরুশকুলের আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য বাঁকখালী নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, সেতুটি উদ্বোধনের পর শহরের দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। আগে নৌকায় চড়ে দিনের বেলায় লোকজন পারাপার হতো। এখন দিন–রাত সব সময় খুরুশকুলে যাতায়াতের সুযোগ পাবে মানুষ।

খুরুশকুলের ২৫৩ দশমিক ৩৫০ একর জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছে ১৩৭টি ৫ তলা ভবনের বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাঁই হবে জলবায়ু উদ্বাস্তু ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবারের অন্তত ২০ হাজার দরিদ্র মানুষের। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অগ্রাধিকারের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

প্রস্তুত দৃষ্টিনন্দন সেতু

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, উদ্বোধনের জন্য রং করে সেতু ও আশপাশের এলাকা সাজানো হচ্ছে। শ্রমিকেরা ব্যস্ত লাইট লাগানোর কাজে। চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। ইতিমধ্যে সেতুর আশপাশের খোলা জায়গায় স্তূপ করে রাখা ময়লা–আবর্জনাও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর শুরু হয় বাঁকখালী সেতুর নির্মাণকাজ। কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০২১ সালের ২১ আগস্টের মধ্যে। তবে করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতায় সেতুর কাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরের অক্টোবর মাসে।

নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। অধিদপ্তরের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান প্রথম আলোকে বলেন, উদ্বোধনের পর সেতুটি সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এতে পর্যটনশিল্পের নতুন দ্বার উন্মোচনের পাশাপাশি কম সময়ে মানুষ শহরে যাতায়াতের সুযোগ পাবে। শহর সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেও এই সেতু ভূমিকা রাখবে। সেতু চালু হলে নবগঠিত ঈদগাও উপজেলা এবং চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের দূরত্ব অনেক কমে যাবে।

আরও পড়ুন
কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীতে দৃষ্টিনন্দন সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৫৯ কোটি টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

সেতুকে ঘিরে আশপাশের এলাকার মানুষ অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। খুরুশকুলের মনুপাড়ার বাসিন্দা সাজেদুল ইসলাম বলেন, আগে খুরুশকুলের ফসল ও ঘেরের মাছ কক্সবাজার শহরে বিক্রি করতে যেতে হতো নৌকায় করে। এখন গাড়িতে অল্প সময়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে। সেতু হওয়ায় খুরুশকুলের জায়গাজমির দাম বাড়ছে।

চৌফলদণ্ডির লবণচাষি দিদারুল আলম বলেন, সেখানকার কয়েক হাজার একর জমিতে উৎপাদিত লাখ লাখ মণ লবণ আগে নৌকা ও কার্গোতে সরবরাহ করা হতো। এখন ট্রাকে বোঝাই করে সরাসরি কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।

একটি সেতুতেই শহরের দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, কক্সবাজারের দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন এবং রেল যোগাযোগব্যবস্থার উদ্বোধন হচ্ছে। তখন বাঁকখালী নদীর আশপাশে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

ঝুপড়ি থেকে আশ্রয়ণের ফ্ল্যাট বাড়ির মালিক

কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের সম্প্রসারণকাজ শুরু করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এ জন্য বিমানবন্দরের পশ্চিমে সরকারি জমিতে বসবাসরত প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের লোকজনকে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয় সরকার। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান বলেন, এসব পরিবারের জন্য বাঁকখালী নদীর উত্তর পাশে খুরুশকুলে ফ্ল্যাট বাড়ির বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে যাতায়াতের জন্য বাঁকখালী নদীর ওপর সেতু ও আট কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করছে সরকার।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২২ সালের ২৩ জুলাই গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রথম ধাপে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে তৈরি ২০টি ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় ৬০০ পরিবারের হাতে ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করা হয়। এসব পরিবারের সদস্যেরা অধিকাংশই শুঁটকিশ্রমিক, জেলে, ভ্রাম্যমাণ শুঁটকি বিক্রেতা, রিকশা ও ভ্যানচালক—যাঁদের দিন এনে দিন খেতে হয়। কয়েকটি পরিবার আছে, যারা ভিক্ষা করে চলে।

আরও পড়ুন

২০১৭ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের আওতায় আগামী ডিসেম্বর মাসে নির্মাণকাজ শেষ হবে আরও ৬০টি ভবনের। এতে ঠাঁই পাবে আরও আড়াই হাজার উদ্বাস্তু পরিবার। এরপর ধীরে ধীরে অন্য ভবনগুলোর নির্মাণকাজও শেষ করা হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ৫ তলা ভবনের প্রতিটিতে ৬৫০ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ইউনিট (ফ্ল্যাট) থাকছে। সেখানে আশ্রয় নেবে ৩২টি করে পরিবার। ২০ লাখ টাকা দামের প্রতিটি ফ্ল্যাটের মালিক হতে একেকটি পরিবারের খরচ হবে মাত্র ১ হাজার ১ টাকা। ফ্ল্যাটের মালিকানার দলিল যেদিন হস্তান্তর করা হবে, সেদিন ১ হাজার ১ টাকা আদায় করা হবে।

আরও পড়ুন