বাবার অপেক্ষায় শিশু তামিম, খেলনার আবদার অপূর্ণই থাকল

একমাত্র সন্তান তামিমকে কোলে নিয়ে আহাজারি করছেন মাফিজুলের স্ত্রী মিনা খাতুনছবি: প্রথম আলো

শিশু তামিমের বয়স যখন তিন, তখন বাবা মাফিজুল ইসলাম (২৫) নিখোঁজ হন। তখনো ভালোভাবে কথা বলতে শেখেনি তামিম। দুই বছর অপেক্ষা করেও বাবা বাড়িতে ফেরেনি। সন্তানের এমন অপেক্ষায় চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছেন মা মিনা খাতুন। সান্ত্বনা হিসেবে ছেলেকে বোঝাতেন, বাবা অনেক দূরে গেছেন। টাকাপয়সা আয় করে খেলনা কিনে আনবেন। সন্তানের খেলনার সেই আবদার অপূর্ণ থেকে গেল।

স্বামীর নিখোঁজের দুই বছর দুই মাস পর মিনা খাতুন জানতে পেরেছেন, স্বামী খুন হয়েছেন। ছোট্ট তামিম এখনো বুঝতে পারেনি বাবার শেষ পরিণতির কথা। আক্ষেপে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা মিনা খাতুন। মাফিজুল ইসলাম নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার খলিফাপাড়া মহল্লার আজাদ প্রামাণিকের ছেলে। বাড়ির ১১ কাঠা জমি ছাড়া খেতখামারে কোনো জমি নেই।

ভ্যান চালিয়ে মাফিজুল ইসলাম ও ছোট ছেলে ভাই মাহফুজকে বড় করেছেন আজাদ প্রামাণিক। কর্মজীবনে মাফিজুল রংমিস্ত্রির কাজ করতেন। মাহফুজ একটি জুতার দোকানে কাজ করছেন। বাবা-ছেলের আয়ে সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু দুই বছর আগে হঠাৎ মাফিজুল নিখোঁজ হলে সংসারে অভাব দেখা দেয়। নিরুপায় হয়েই আজাদ প্রামাণিক ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালিয়ে মাফিজুলের স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণ করেন। রোববার মাফিজুলের লাশ উদ্ধারের পর থেকে পরিবারটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

রোববার বিকেলে মাফিজুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, স্ত্রী-স্বজনেরা আহাজারি করছেন। মা মাহিনুর বেগম ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে গেছেন। মাঝেমধ্যে ছেলের শোকে চিৎকার করে উঠছেন। বাবা আজাদ প্রামাণিক কোনো কথা বলছেন না। অনেকটাই নির্বাক।

আরও পড়ুন

মাফিজুলের স্ত্রী মিনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। তিন বছর সংসার করতে পারলেও দুই বছর ধরে স্বামীহীন। একমাত্র সন্তান তামিমকে (৫) নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় দিন কেটেছে। কিন্তু এখন নিশ্চিত হয়েছি, স্বামী খুন হয়েছেন। এখন তাঁর ও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।’

মাফিজুলের বাবা আজাদ প্রামাণিক বলেন, ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর ছেলেকে অনেক খুঁজেছেন। অনেক টাকা ব্যয় করায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু নিখোঁজ ছেলে খুন হবে, এমনটা ভাবেননি কখনো। আজ ছেলের লাশ পাওয়ার পর সব আশা শেষ হয়ে গেছে। এখন ছেলের বউ ও একমাত্র নাতির ভবিষ্যৎ কী হবে? একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আজাদ প্রামাণিক।

আরও পড়ুন

আজাদ প্রামাণিক আরও বলেন, ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল ছেলের নিখোঁজের পর ৭ মে গুরুদাসপুর থানায় একটি জিডি করেছিলেন। কিন্তু দুই বছরেও থানা-পুলিশ জিডির বিষয়টি আমলে নেয়নি। সম্প্রতি প্রতিবেশী জাকির মুন্সির তথ্যে ছেলের শেষ পরিণতির বিষয়ে জানতে পারেন। শুক্রবার থানায় হত্যা মামলার পর পুলিশ ছেলের লাশ উদ্ধার করে। আসামিদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।