দুই সপ্তাহ পার হলেও সেই লিফট অপসারণ হয়নি

চাওয়া হয়েছিল ‘এ’ গ্রেডের লিফট। সরবরাহ করা হয়েছে ‘সি’ গ্রেডের লিফট। এই দুই লিফটের দামের পার্থক্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালফাইল ছবি

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্মাণাধীন নতুন আইসিইউ ইউনিটের একটি লিফট স্থাপনে জালিয়াতি ধরা পড়েছে। ঠিকাদারকে এক সপ্তাহের মধ্যে লিফট অপসারণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও ঠিকাদার লিফট অপসারণ করেননি। ওই লিফটই গছানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।

তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, এই লিফট বাতিল। এটি সরাতেই হবে। এ নিয়ে আগামী রোববার ঢাকায় একটি বৈঠক ডাকা রয়েছে। আবার পুনঃ তদন্তের জন্য আরেকটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিও রোববার রাজশাহীতে আসার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফজলুল হক শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, আগামী রোববার লিফট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বসা হবে। তারা এই লিফট অপসারণ করে নতুন একটি লিফট লাগিয়ে দেবে। তিনি বলেন, দরপত্রে ফায়ার লিফট (অগ্নি প্রতিরোধক) চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এটা শুধু প্যাসেঞ্জার লিফট। এ লিফট সরাতেই হবে। ঠিকাদারকে দিয়েই লিফট আনার ব্যবস্থা করা হবে। কারণ, এই লিফট বাইরে থেকে আনতে গেলে এখন দেড় কোটি টাকা লাগবে। কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করলে সরকারের দেড় কোটি টাকা গচ্চা যাবে। 

বিষয়টিতে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হবে জানিয়ে ফজলুল হক বলেন, লিফট আসার আগেই এটি পরিদর্শন করা হয়। এটাকে ‘পিএসআই’ বলে। গতবার করোনা পরিস্থিতির কারণে পিএসআই করা সম্ভব হয়নি। এই সুযোগটাই সম্ভবত ঠিকাদার কাজে লাগিয়েছেন। নিয়ম হলো যে দেশ থেকে লিফট আসবে, একজন কর্মকর্তা সেখানে গিয়ে কয়েকটি স্পেসিফিকেশনে স্বাক্ষর করে আসবেন। বাংলাদেশে এলে সেই কর্মকর্তা মিলিয়ে দেখবেন যে লিফটে তিনি সই করে দিয়েছিলেন, সেটিই এসেছে কি না। তখন আর দুই নম্বরি করার কোনো সুযোগ থাকবে না।

লিফট স্থাপনে জালিয়াতি ধরা পড়ার পর ৭ মে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে লিফটটি অপসারণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়। দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও ঠিকাদার লিফট অপসারণ করেননি।

এ অনিয়মের বিষয়ে ৯ মার্চ প্রথম আলোতে ‘ঠিকাদারের বিরুদ্ধে লিফট স্থাপনে অনিয়মের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর একটি প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৬০০ কেজি প্যাসেঞ্জার কাম বেড লিফটের দরপত্র মোতাবেক স্পেসিফিকেশন আনুযায়ী সঠিক কি না, তা যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। 

৬ মে এই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী এই লিফট লাগানো হয়নি। চাওয়া হয়েছিল ‘এ’ গ্রেডের লিফট। সরবরাহ করা হয়েছে ‘সি’ গ্রেডের লিফট। এই দুই লিফটের দামের পার্থক্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। আবার চাওয়া হয়েছিল ‘ফায়ার প্রটেকটেড’ লিফট। দেওয়া হয়েছে সাধারণ লিফট। এই অনিয়মের কারণে ঠিকাদারকে সাত দিনের মধ্যে লিফট অপসারণে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও লিফট অপসারণ করা হয়নি। গণপূর্ত বিভাগও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। 

এদিকে গণপূর্তের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঠিকাদার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এই লিফট গছিয়ে দেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। চিঠি পাওয়ার পর তিনি আর এই প্রতিবেদকের ফোন ধরছেন না।