বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখা ঢাবি ছাত্র নূর নবী বাবা–মায়ের কাছে ফিরলেন লাশ হয়ে

নূর নবী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র
ছবি: সংগৃহীত

পড়াশোনার জন্য নূর নবীকে কখনো চাপ দিতে হয়নি। শাসন করারও প্রয়োজন পড়েনি। এসএসসি ও এইচএসসি দুই পরীক্ষাতেই পেয়েছিলেন জিপিএ-৫। ইচ্ছা ছিল উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে দেশের বাইরে যাওয়ার, স্বপ্ন ছিল বড় কিছু করার। পরিবারের কথা ভাবতেন তিনি। নিয়তির নির্মম পরিহাসে সেই নূর নবী এখন অতীত। রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবে বিস্ফোরণে আহত হয়ে ১৭ দিন আইসিইউতে থাকার পর মারা গেছেন তিনি।

নূর নবী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক হলে। তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার সালুয়া ইউনিয়নের দড়িগাঁও গ্রামে। আজ সকালে সেই গ্রামেই নূর নবীর দাফন হয়েছে।

আরও পড়ুন

নূর নবীর বাবা জসিম উদ্দিন পেশায় ব্যবসায়ী। মা বিউটি আক্তার গৃহিণী। জসিম উদ্দিন-বিউটি দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে নূর নবী ছিলেন মেজো। তাঁর বড় ভাই মো. আলী পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই)। ছোট ভাই ফখর উদ্দিন গ্রামের স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে যখন নূর নবীর মরদেহ গ্রামে আনা হয়, তখন দড়িগাঁও গ্রামে শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হয়। মরদেহের সঙ্গে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁর সহপাঠী ও বন্ধুরা। আজ সকালে আশপাশের গ্রাম থেকে দলে দলে লোকজন আসেন নূর নবীকে শেষবারের মতো দেখতে। সকাল ১০টার দিকে জানাজা শেষে তাঁকে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নূর নবী। ৫ মার্চ, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

নূর নবীর চাচাতো ভাই মুর্শিদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজেকে গুছিয়ে রাখত বলে নূর নবী কখনো বাবা-মায়ের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ ছিল না। এটাই ছিল তার অন্যতম ভালো গুণ। তার ব্যাপারে আমাদের ধারণা ছিল, সে একদিন বড় কিছু হবে। আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আহত হওয়ার পর গ্রামের মানুষ নূর নবীর জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করেছিল।’

আরও পড়ুন

ছেলে হারিয়ে বাবা জসিম উদ্দিন অনেকটা নির্বাক হয়ে পড়েছেন। কারও সঙ্গেই কথা বলছিলেন না। কিছু সময় পরপর দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন। মা বিউটি আক্তারও শয্যাশায়ী। তাঁর একটাই কথা, ‘আমার ছেলেরে নিয়ো না। আমার কাছে রেখে যাও।’

৫ মার্চ দুপুরের দিকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় শিরিন ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায় ওই ভবনে। বিস্ফোরণের সময় ওই ভবনের নিচে ছিলেন নূর নবী। এ সময় তাঁর মাথায় ওপর থেকে ভারী বস্তু পড়ে। এতে তাঁর মাথা ফেটে যায়। এ ছাড়া তাঁর ডান পা ভেঙে যায়। আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। সেই চিকিৎসার ইতি ঘটে গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে।