শিক্ষক হতে চেয়েছিল সোলাইমান, সিলিন্ডারের আগুনে পুড়ল স্বপ্ন

সোলাইমানের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন মা–বাবা। মঙ্গলবার বিকেলে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভালুকজান গ্রামেছবি: প্রথম আলো

গ্রামের বাড়িতে চাচার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার শিক্ষক হতে চেয়েছিল আট বছর বয়সী সোলাইমান। ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে মা-বাবা তাকে গাজীপুরের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সোলাইমানের সেই স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়েছে। আগুনে পুড়ে পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে সোলাইমান।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছিল সোলাইমান। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার সে মারা যায়। গতকাল রাতেই ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভালুকজান গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।

আরও পড়ুন

সোলাইমান ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভালুকজান গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে। মায়ের নাম রানী আক্তার। অভাব-অনটনের কারণে সাত বছর আগে ফুলবাড়িয়া থেকে গাজীপুরে চলে যান এই দম্পতি। চার সন্তান নিয়ে তাঁরা গাজীপুরে বসবাস করতেন। রানী আক্তার একটি জুতার কারখানায় কাজ করেন। শফিকুল ফুটপাতে সেদ্ধ ডিম বিক্রি করেই সংসার চালাতেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে ভালুকজান গ্রামে শফিকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে ছেলের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন মা-বাবা। সঙ্গে কয়েকজন প্রতিবেশী। মা রানী আক্তারের কান্না থামছেই না।

আরও পড়ুন

রানী আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোববার দিবাগত রাতে আমি যখন হাসপাতালের বারান্দায় বসে ছিলাম, আমার মন ছটফট করছিল। বারবার ভেতরে যেতে চেয়েছি। কিন্তু নিয়ম না থাকায় আমাকে ভেতরে যেতে দেয়নি। কিছুক্ষণ পরই আমার ছেলের মৃত্যুর খবর এল। খবর শুনে কেমন লাগল, কাউকে বুঝাইতে পারব না। আর কোনো দিন সোলাইমান ফিরবে না, এটা কোনোভাবেই মানতে পারছি না।’

সোলাইমানের চাচা আশরাফুল ইসলাম কয়েক বছর আগে গ্রামে একটি মাদ্রাসা দিয়েছেন। এর পর থেকে সোলাইমান বলত, সে চাচার মাদ্রাসার শিক্ষক হবে। তার স্বপ্ন পূরণের জন্য তাকে গাজীপুরের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। এ কথা বলতে বলতে বাবা শফিকুল ইসলামের চোখ ভিজে আসে।

আরও পড়ুন

শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলেটা আমার একটু চঞ্চল ছিল। সিলিন্ডার বিস্ফোরণের দিন সিলিন্ডারটি যখন এক প্রতিবেশী বাইরে রাখেন, তখন অন্য প্রতিবেশীরা নিষেধ করেন। নিষেধ না মানায় এ নিয়ে কথা–কাটাকাটি হতে থাকে। কথা–কাটাকাটির হইচই শুনে সোলাইমান দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে একবারে সিলিন্ডারটার সামনে দাঁড়ায়। শুনেছি, ঠিক তখনই সিলিন্ডারটা বিস্ফোরণ ঘটে। কয়েক দিন লাইফ সাপোর্টে ছিল। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাকে নিয়েই গেল। আমার ছোট ছোট দুইটা মেয়ে আছে। ওরাও ভাইয়ের জন্য কান্নাকাটি করছে।’

আরও পড়ুন

নিহত সোলাইমানের চাচা আশরাফুল ইসলাম বলেন, তাঁদের সাত ভাইয়ের মধ্যে শফিকুলের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এ জন্য তাঁকে বাড়ি ছাড়তে হয়। বাড়িতে নিয়মিত না থাকলেও ঈদে আসতেন। সোলাইমান তাঁকেও বলত, সে তাঁর মাদ্রাসায় শিক্ষক হতে চায়। তিনিও আশা করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।

সোলাইমানের এমন মৃত্যুর ঘটনা পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গ্রামের প্রবীণ একজন বাসিন্দা বলেন, ‘সোলাইমানের আগুনে পুড়ে যাওয়ার খবরটা শোনার পর থেকেই আমরা খুব শঙ্কায় ছিলাম। অবশেষে শঙ্কাই সত্যি হলো।’