সিসিইউর সব এসি বিকল

এসি বন্ধ থাকায় বদ্ধ কক্ষে দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা বলে জানান রোগী ও তাঁর স্বজনেরা।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউর শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বিকল থাকায় রোগীদের ভোগান্তি। গত শনিবার রাতেপ্রথম আলো

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) ১০টি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) এক মাস ধরে বিকল হয়ে আছে। এতে রোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে এখানে বৈদ্যুতিক পাখা থাকলেও সেগুলোও পুরোনো হওয়ায় কম ঘোরে। এমনিতেই শয্যার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি রোগী প্রতিদিনই ভর্তি থাকছে। সঙ্গে যোগ হয় তাঁদের স্বজনেরা। এসি বন্ধ থাকায় দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা বলে জানান রোগী ও তাঁর স্বজনেরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালের এসব বিষয় দেখভাল করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগ। এই বিভাগকে এসিগুলো সচল অথবা পুনঃস্থাপনের জন্য একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

গত শনিবার রাতে সরেজমিন দেখা যায়, সিসিইউ ইউনিটে সব সময় নীরবতা থাকার কথা থাকলেও রোগীর ভিড়ে সরগরম। শয্যা না পেয়ে অনেক রোগী মেঝেতে শয্যা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র সবগুলো বিকল থাকায় গরমে অস্থির রোগী ও স্বজনেরা। ফ্যানগুলো ঘুরছে ঢিমেতালে। স্বজনেরা হাতপাখা নিয়ে রোগীদের বাতাস করছেন।

বাকেরগঞ্জ থেকে আসা রোগী আবুল কাশেমের (৮০) পাশে এক নারী হাতপাখা নিয়ে বাতাস করছিলেন। জানা গেল, তিনি রোগীর পুত্রবধূ। তিনি বলেন, ‘ফ্যানের যে বাতাস, হ্যা গায় লাগে না। দ্যাহেন না ঘোরে কত আস্তে আস্তে। হেইতে বাইরে গোনে পাহা (পাখা) কিন্নি আনছি।’

হৃদ্‌রোগীদের সিসিইউ বিভাগে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলো অনেক দিন ধরে নষ্ট। এসব বিষয় সমাধান চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা তেমন সাড়া পাচ্ছি না।
মনিরুজ্জামান শাহিন, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন), শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

এ সময় আরেক রোগীর এক নারী স্বজন এসি বন্ধ থাকায় এই ওয়ার্ডে কর্মরত এক আয়ার সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা করছিলেন। মেঝেতে অনেক রোগী, তাঁদের অবস্থাও গরমে কাহিল।

পটুয়াখালীর দুমকি থেকে আসা রোগী গোলাম কিবরিয়ার (৫৮) বোন জিনাত জাহান (৩৫) বলেন, ‘গরমে অস্থির অবস্থা। এসিগুলো অকেজো। ফ্যানগুলোর অবস্থাও কাহিল, বাতাস দেয় না। খুব খারাপ অবস্থা।’

আরও কয়েকজন রোগী ও স্বজনেরা জানান, মেডিসিন বা অন্য কিছু ওয়ার্ডে যেমন রোগীর ভিড় থাকে, এ বিভাগেও তেমন ভিড় থাকে। বদ্ধ কক্ষে বাইরের বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই। তাই এসি না চলায় সিসিইউ কক্ষে দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকে।

সিসিইউয়ের দায়িত্বরত স্টাফরা বলেন, হাসপাতালের মূল ভবনের ভেতরে বিভাগটি এমনভাবে নির্মিত, যেখানে দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক থেকে বাতাস চলাচল করতে পারে না। ভবন নির্মাণে কৌশলগত ত্রুটির কারণেও ভেতরটা গরম হয়ে থাকে। ভেতরে এসি না চালিয়ে রাখলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০০২ সালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলের মূল ভবনের পূর্ব পাশে ‘আই’ ও ‘এফ’ ব্লক ঘেঁষে মুমূর্ষু রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) ভবন নির্মাণ করা হয়। সিসিইউ ইউনিটে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বর্তমানে বিকল। ফ্যানগুলোও পুরোনো হওয়ায় তেমন কাজে আসছে না।

স্টাফ নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি হিসাবে সিসিইউ ও পিসিসিইউ বিভাগে চারটি করে মোট আটটি শয্যা বরাদ্দ রয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর চাপ সামলাতে দুটি ওয়ার্ডে ৪৩টি শয্যা দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান অবস্থা ভিন্ন। বিভাগে রোগী ভর্তি থাকে দ্বিগুণের বেশি। যে কারণে মেঝেতে থেকেও চিকিৎসা নিতে হয় রোগীদের। আগে এসি সচল ছিল। এখন বিকল হয়ে পড়ায় রোগীদের দুর্ভোগ হয় ব্যাপক। তাঁরা নিজেরাও কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। একজন রেজিস্ট্রার এবং তিনজন চিকিৎসা কর্মকর্তা দিয়ে পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে এই ইউনিটের রোগীদের। তবে শয্যা সংখ্যা কম হওয়ায় প্রতিদিন দ্বিগুণ-তিন গুণ রোগী এখানে ভর্তি হন। ফলে ওয়ার্ডের মেঝেতেও রোগীদের শয্যা দিতে হয়।

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মনিরুজ্জামান শাহিন গতকাল সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘হৃদ্‌রোগীদের সিসিইউ বিভাগে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলো অনেক দিন ধরে নষ্ট। এসব বিষয় সমাধান চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা তেমন সাড়া পাচ্ছি না।’

জানতে চাইলে হাসপাতাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের মেডিকেল উপবিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী ফিরোজ গতকাল দুপুরে আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিসিইউ বিভাগের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলো বহু পুরোনো হওয়ায় সেগুলো কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। এর আগে একবার মেরামত করা হলেও বেশি দিন ব্যবহার করা যায়নি। সমস্যা সমাধানের জন্য পাঁচ টন ক্ষমতার ৯টি নতুন এসি কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র সচল করা সম্ভব হবে।’