মেডিকেল কলেজে সুযোগ পেয়েও দুশ্চিন্তা কাটেনি ফরহাদের

মা–বাবার সঙ্গে ফরহাদ হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

ঘরের শেষ সম্বল গরু বিক্রি করে ছেলে ফরহাদকে মেডিকেল কলেজে ভর্তির কোচিং করিয়েছেন মা। ছেলেও হতাশ করেননি। সুযোগ পেয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে। তখন টাকা ধার করে ছেলেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছেন। কিন্তু এখন কীভাবে ছেলের পড়ার খরচ চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন মা মোছাম্মত হোসনে আরা খাতুন।

যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. ফরহাদ হোসেন (১৯)। বাবা মনিরুজ্জামান ৬ বছর আগে ২০১৭ সালে স্ট্রোক করে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তখন থেকে মা হোসনে আরা খাতুন আগলে রেখেছেন পরিবারটিকে। সারা দিন পরিশ্রম করেছেন সন্তানদের পড়াশোনা করানোর জন্য। ছেলে ভালো জায়গায় পড়ার সুযোগ পেয়েছেন, তবে তাঁর পড়ার খরচ কীভাবে জোগাড় করবেন, তা জানেন না তিনি।

টিনের ছাউনির ছোট দুটি ঘরে বসবাস ফরহাদ হোসেনের মা-বাবা ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া ছোট বোন ফাহমিদা খাতুনের। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফরহাদের বাবা ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। পরে স্ট্রোক করে স্বাভাবিকভাবে চলাচলের শক্তি হারান। ২০১৭ সাল থেকে সংসারের হাল ধরতে হয় হোসনে আরা খাতুনের। পারিবারিকভাবে পাওয়া ৬ কাঠা জমি ফসল ফলানোর জন্য ইজারা দিয়ে দেন। কিন্তু সে টাকায় দিন চলত না। তিনি একটি বিমা কোম্পানিতে কাজ নেন। সেটিতেও ভালো উপার্জন হতো না। পরে হোসনে আরা দরজির কাজ করে ছেলে-মেয়েদের পড়াতে থাকেন। বইপত্র বিভিন্নজনের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে চলতে থাকে ফরহাদের লেখাপড়া। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনোর পর কেশবপুর পাইলট উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন ফরহাদ।

আরও পড়ুন

ফরহাদ বলেন, বাবা-মায়ের অভাব বুঝতে পেরে তাঁরও কোনো চাহিদা ছিল না। ভোরে শিক্ষকদের কাছে টিউশনি পড়ে মসজিদে সময় কাটাতেন। বিদ্যালয়ে গিয়ে আবার সন্ধ্যায় একবারে বাড়ি ফিরতেন। দুপুরের খাবার কোনো দিন জোটেনি তাঁর। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান। পরে উচ্চমাধ্যমিকে আরও কঠিন সংগ্রাম করতে হয় তাঁর। শিক্ষকেরা টাকা না নিয়ে তাঁকে পড়াতেন। শিক্ষক দীনেশ দেবনাথ ও প্রবেশ দাসের অবদান কোনো দিন ভুলতে পারবেন না। এভাবে এইচএসসিতেও পেয়ে যান জিপিএ-৫।

ফরহাদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষার জন্য খুলনার একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। পড়ার জন্য টাকার জোগাড় না হওয়ায় পরিবারের শেষ সম্বল গরুটি বিক্রি করে দেন তাঁর মা। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় রাজশাহী মেডিকেলে পড়ার সুযোগ হয়। পরে ঋণ নিয়ে টাকা জোগাড় করে ভর্তি হন তিনি। এখন দুশ্চিন্তা, কীভাবে পড়ার খরচ জোগাবে তাঁর পরিবার?

আরও পড়ুন

হোসনে আরা খাতুন বলেন, খেয়ে না–খেয়ে দিন কেটেছে, কাউকে বুঝতে দেননি। এমনকি ছেলে-মেয়েদেরও না। অভাবের কারণে একদিন রাগ করে ছেলের বই–খাতা সব ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলে কিছু মনে না করে সেই বই কুড়িয়ে নিয়ে আবার বিদ্যালয়ে যায়। সে ছেলে এখন ভালো জায়গায় পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। খরচ জোগাড়ের চিন্তা জেঁকে ধরেছে তাঁকে।  

সাতবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, ফরহাদ তাঁদের গ্রামের গর্ব। তাঁর মতো মেধাবী ভালো ছেলে আর হয় না। দারিদ্র্য তাদের পরিবারের জন্য বড় বাধা। ফরহাদ সহযোগিতা পেলে অবশ্যই ভালো চিকিৎসক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে।