অর্থাভাবে নুর ইসলামের মেডিকেল ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা

নুর ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার রায় দৌলতপুর ইউনিয়নের গোপালপুর বাঁশতলা গ্রামের মোসলেম খান ও নাসিমা বেগম দম্পতির ছেলে নুর ইসলাম। তিনি এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৩ হাজার ১৪তম হয়ে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু পারিবারিক টানাপোড়েন ও অর্থাভাবে তাঁর মেডিকেলে ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

নুর ইসলাম তিন ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তাঁর বড় বোনের বিয়ে হয়েছে, ছোট ভাই অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। নুর ইসলাম বলেন, তাঁর বাবা মোসলেম খান বর্তমানে গাজীপুরের একটি বেসরকারি পাটকলে মাসিক সাত হাজার টাকা বেতনে শ্রমিকের কাজ করেন। এর আগে তাঁর বাবা খুলনায় একটি পাটকলে শ্রমিকের কাজ করতেন।

নুর ইসলাম খুলনায় প্রাথমিক থেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। বর্তমানে তাঁর বাবা গাজীপুরে কাজ করায় তাঁরা গ্রামেই থাকেন। তাঁর মা নাসিমা বেগম গৃহিণী। নুর ইসলামের বাবা মোসলেম খান বলেন, ‘ছেলে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে ঠিকই। গরিবের জন্য সব সময় সব সুযোগ কাজে লাগে না। ছেলেকে মেডিকেলে ভর্তি করার সামর্থ্য আমার নেই।’

মোসলেম খান আরও বলেন, ‘মাসে সাত হাজার টাকা বেতন পেয়ে সংসার চালানই মুশকিল, তার ওপর ছেলে দুইটার লেখাপড়া। তাই নিয়মিত কাজের সঙ্গে আরও অতিরিক্ত কাজ করে কিছু টাকা বাড়তি আয় করার চেষ্টা করছি। তবে বয়সটা বেশি হওয়ায় সেটাও খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ভর্তির টাকার জন্য আত্মীয়স্বজনের কাছে ধার চাচ্ছি। এ ছাড়া এত টাকা আমি কোথায় পাব?’

খুলনার দিঘুলিয়ার গাজিপাড়ায় স্টার জুট মিলস উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন নুর ইসলাম। সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের সরকারি হাজি কোরপ আলী মেমোরিয়াল কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। নিজে টিউশনি করে, কখনো অন্যের জমিতে কাজ করে এ পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন।

আক্ষেপ করে মোসলেম খান বলেন, ‘আমরা ছেলেকে মেডিকেল কলেজে কীভাবে পড়াব, এত খরচ কোথায় পাব? ছিঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন। মেডিকেল কলেজে ছেলেকে পড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও তা আমার সাধ্যের বাইরে।’

নুর ইসলাম। সোমবার দুপুরে কামারখন্দ উপজেলার রায় দৌলতপুর ইউনিয়নের গোপালপুর বাঁশতলা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

চলতি বছর মা–বাবাকে না জানিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলেন নুর ইসলাম। ভর্তির আর মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও ভর্তি ও আনুষঙ্গিক খরচের টাকা এখনো সংগ্রহ করতে পারেনি তাঁর পরিবার। মোসলেম খানের বড় মেয়ে মুক্তা খাতুনকে অর্থাভাবে নবম শ্রেণিতে পড়ালেখা করা অবস্থায় ২০১০ সালে তাঁতশ্রমিকের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালানো ও সংসার খরচ বহন করা মোসলেম খানের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।

মা নাসিমা বেগমের সঙ্গে নুর ইসলাম। সোমবার দুপুরে কামারখন্দ উপজেলার রায় দৌলতপুর ইউনিয়নের গোপালপুর বাঁশতলা গ্রামে
ছবি: আরিফুল গণি

নুর ইসলামের মা নাসিমা বেগম জানান, বর্তমানে খুব অভাবের মধ্য দিয়ে তাঁদের সংসার চলে। অভাবের কারণে মেয়েটাকে পড়াতে পারেননি। ছেলেকে কীভাবে মেডিকেলে ভর্তি করাবেন, পড়ালেখার খরচ জোগাবেন, বুঝতে পাচ্ছেন না।
নুর ইসলাম বলেন, ‘আমার ইচ্ছা, চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষকে সেবা করব। বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করব। পরিবারের অর্থাভাব দূর করব। কিন্তু জানি না, আমার সে আশা আদৌ পূরণ হবে কি না?’

সরকারি হাজি কোরপ আলী মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ভাস্কর কুমার প্রথম আলোকে বলেন, নুর ইসলাম তাঁদের প্রতিষ্ঠানের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তাঁর মতো মেধাবী শিক্ষার্থীকে সহায়তা করলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।