অপরাধ ও দুর্ঘটনা রোধে ৪৯০ স্থানে বসছে উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরা

সিসিটিভি ক্যামেরা
ফাইল ছবি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪৯০টি স্থানে বসানো হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির ১ হাজার ৪৬০টি ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা। মহাসড়কের ২৬৫ কিলোমিটারের মধ্যে চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি রোধসহ যানবাহনের বেপরোয়া গতি নজরদারিতে এসব ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে। ইতিমধ্যে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় ক্যামেরা বসাতে খুঁটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা, সোনাইছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর জন্য খুঁটি (পোল) তৈরির কাজ করছেন শ্রমিকেরা। একটি খুঁটি নির্মাণে চার থেকে পাঁচজন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পিকআপচালক মো. রুবেল বলেন, যন্ত্রপাতি ও শ্রমিকদের নিয়ে আধা কিলোমিটার পরপর ক্যামেরার খুঁটি বসানো হচ্ছে। খুঁটি বসানো শেষ হলে ক্যামেরা লাগানো হবে।

মহাসড়কে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে হাইওয়ে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, মহাসড়কে ক্যামেরা বসাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ এবং ডেটা প্রবাহের জন্য বিটিসিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ও প্রকল্প পরিচালক বরকত উল্লাহ খান বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪৯০টি স্থানে মোট ১ হাজার ৪৬০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। কাজটি শেষ হলে পুরো মহাসড়ক ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে থাকবে।

হাইওয়ে পুলিশ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ২৩ জুন হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের অধীনে মহাসড়কে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এরপর প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুনে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপ।

স্মার্ট গ্রুপের প্রকল্প পরিচালক শরীফ সারোয়ার বলেন, তাঁরা নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন। সমস্যা হলো মহাসড়কের পুরো জায়গায় বিটিসিএলের ডেটা লাইন নেই। বিটিসিএল ডেটা লাইনের কাজ করছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগও যথাসময়ে সংযোগের কাজ শেষ না করতে পারলে সিস্টেম কাজ করবে না। তাঁরাও বিভিন্ন স্থানে খুঁটি নির্মাণের কাজ করছেন। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলমান থাকায় বিদ্যুতের খুঁটি নির্মাণে একটু দেরি হতে পারে। এতে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না–ও হতে পারে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য খুঁটি তৈরি করছেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

প্রকল্পটির পরিচালক বরকত উল্লাহ খান বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর ফলে রিয়েল টাইম মনিটরিং করা যাবে। আইন লঙ্ঘনকারী গাড়ি দ্রুত শনাক্ত করা যাবে। শনাক্ত করা যাবে নম্বর প্লেট, গতিপথ, সন্দেহজনক অনুপ্রবেশ, বেপরোয়া গতি, স্লো ট্রাফিক এলাকাসহ নানা কর্মকাণ্ড। ক্যামেরাগুলোর মধ্যে আছে লং ভিশন ক্যামেরা, পিটিজেড ডোম ক্যামেরা, চেকপয়েন্ট ক্যামেরা ও বুলেট ক্যামেরা।

উদ্দেশ্য চুরি-ডাকাতি, দুর্ঘটনা রোধ

চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৯৫ শতাংশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে পরিবহন করা হয়। বাকি ৫ শতাংশ রেলপথ ও নৌপথে আনা-নেওয়া করা হয়। কিন্তু ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে রপ্তানিপণ্য নেওয়ার সময় প্রায়ই চুরির ঘটনার অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী ও পরিবহনমালিকেরা। এ ছাড়া ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনারও অভিযোগ আছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটে।

হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হলে চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধ অনেকাংশ কমে আসবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা পাবে।

যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে ক্যামেরা

হাইওয়ে পুলিশ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ঢাকার সাইনবোর্ড থেকে চট্টগ্রামের সিটিগেট পর্যন্ত দুটি রেঞ্জে বিভক্ত হাইওয়ে পুলিশ। দাউদকান্দি থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত গাজীপুর রেঞ্জ এবং বাকি অংশ কুমিল্লা রেঞ্জ। মহাসড়কে লাগানো ৪৯০টি পোল (ক্যামেরা লাগানোর খুঁটি) ৫টি মনিটরিং সেন্টার থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আর একটি সেন্টারে ডেটা রেকর্ড হবে। ৪৭৪টি খুঁটি গাড়ি ও চালক শনাক্ত করবে, ১৬টি চেকপয়েন্ট খুঁটি থাকবে, যেগুলো বেপরোয়া গতি শনাক্ত করবে।

সূত্র জানায়, ক্যামেরা থেকে ডেটা রেকর্ডের জন্য মেঘনাঘাট এলাকায় একটি দ্বিতল ডেটা সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। একতলায় একটি ডেটা সেন্টার এবং অন্য তলায় একটি মনিটরিং সেন্টার থাকবে। এ ছাড়া গাজীপুর রেঞ্জে একটি মনিটরিং সেন্টার হবে। আর কুমিল্লা রেঞ্জের চারটি মনিটরিং সেন্টারের মধ্যে মেঘনাঘাট ছাড়াও দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা, কুমিল্লা রেঞ্জ কার্যালয় ও বারআউলিয়া হাইওয়ে থানায়ও একটি করে মনিটরিং সেন্টার হবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শরীফ সারোয়ার বলেন, মনিটরিং সেন্টারে হাইওয়ে পুলিশের একটি দল কাজ করবে। মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলোর কোনো গাড়ি অতিরিক্ত গতিতে চললে বা দুর্ঘটনা ঘটালে মনিটরিং সেন্টারে অ্যালার্ম (সংকেত) বেজে উঠবে। এরপর মাঠে থাকা হাইওয়ে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে। এর মাধ্যমে গাড়ি ও চালককে শনাক্ত করা যাবে।

প্রকল্প পরিচালক বরকত উল্লাহ খান বলেন, এটি বাংলাদেশে প্রথম ও পরীক্ষামূলক প্রকল্প। প্রথম দিকে দক্ষ জনবল তৈরিতে বাছাই করা কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরপর তাঁরা দেশে ফিরে অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন।