খাদ্যগুদামে একজনকে টেনেহিঁচড়ে বের করছেন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা, ভিডিও ভাইরাল

ময়মনসিংহের ফুলপুর খাদ্যগুদামে টেনেহিঁচড়ে বের করছেন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা একজনকে চেয়ার থেকে টানাটানি করছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

আজ শনিবার ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ‘চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্যে বিএনপির সন্ত্রাস অব্যাহত! ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের “আহ্বায়ক” (হবে সদস্যসচিব) দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ফুলপুর খাদ্যগুদামে চাঁদা চাওয়ায় তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কর্মকর্তাদের মারধর, অফিস ও ফার্নিচার ভাঙচুর করা হয়।’

ভিডিওটি সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ঘটনাটির সঙ্গে দেলোয়ারের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। এটি যে ফুলপুর উপজেলা খাদ্যগুদামে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের ঘটনা, তা–ও নিশ্চিত হওয়া গেছে। ১৩ জানুয়ারি এ ঘটনা ঘটে। তবে ভিডিওতে দেলোয়ারকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ‘আহ্বায়ক’ দাবি করা হলেও তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর খাদ্যগুদামে কর্মকর্তাদের মারধর ও টানাহেঁচড়ার কথা দাবি করা হলেও মূলত সেদিন চেয়ার থেকে যাঁকে টেনেহিঁচড়ে বের করা হয়, তাঁর নাম লিয়াকত আলী। তিনি ফুলপুর উপজেলা বিএনপির কর্মী। লিয়াকত আলী নিজেই প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

লিয়াকত আলী ময়মনসিংহ মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জোবায়েদ হোসেন ওরফে শাকিল গ্রুপের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। জোবায়েদ হোসেন ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সংসদ সদস্য পদে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।
তবে এ সম্পর্কে জানতে আজ দুপুরে ফুলপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আতিকুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটি অস্বীকার করেন। খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘আমার কার্যালয়ে চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা নেই, কেউ চাঁদা চায়নি। যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, সেটি আমার দপ্তরের কি না, তা–ও স্পষ্ট নয়। যেদিন ঘটনাটি দেখানো হয়েছে, সেদিন আমি অফিসে ছিলাম না। আমার অফিসের কেউ বিষয়টি সম্পর্কে বলতেও পারেনি। তারপরও বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে রেখেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভিডিওটি ছড়িয়ে দিয়ে যে দাবি করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অসত্য।’
তবে ফুলপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব দেলোয়ার হোসেন আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির একটি পক্ষের নেতা জোবায়েদ হোসেনের নাম ভাঙিয়ে উপজেলার দিউ গ্রামের লিয়াকত আলী সরকারি বিভিন্ন অফিসে চাঁদা দাবি করছেন। গত সোমবার বিষয়টি টের পেয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে গিয়ে চাঁদাবাজ হিসেবে তাঁকে ধরি। বিষয়টি নিয়ে সেদিনই আমি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমি কোনো চাঁদাবাজি করতে যাইনি। ফেসবুকে কী ভাইরাল হলো, তা আমার দেখার বিষয় নয়।’

তবে লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্য বিভাগ থেকে পরিচালিত ওএমএস ডিলার নিয়োগ–সংক্রান্ত বিষয় জানতে গত সোমবার সকালে খাদ্যগুদামে গিয়েছিলাম। সেদিন আমার সঙ্গে একজন ছিল। আমাকে সেদিন পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল জোবায়েদ গ্রুপের সভাপতি হিসেবে। কারণ, কোনো সভা হলে জোবায়েদ আমাকে সম্মানস্বরূপ অনুষ্ঠানের সভাপতি করেন। এ সময় দেলোয়ার ১০-১৫ জন লোক নিয়ে বলতে থাকেন “কিসের সভাপতি”। এ সময় উচ্চবাচ্য করে আমাকে কলার ধরে চেয়ার থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে দেন। পরে তাৎক্ষণিক বিষয়টি নিয়ে থানায় গিয়ে লিখিতভাবে জানাই। লিয়াকত আলী বলেন, ‘আমি কোনো চাঁদা চাইতে যাইনি। সুষ্ঠু তদন্ত করলেই তার প্রমাণ মিলবে।’

ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হাদি বলেন, বিএনপির দুটি পক্ষের দ্বন্দ্বে খাদ্যগুদামে ঘটনাটি ঘটে। দুই পক্ষ থেকেই লিখিত অভিযোগ পেয়ে সেটির তদন্ত চলছে। খাদ্যগুদামে চাঁদাবাজির ঘটনা হলে সরকারি কর্মকর্তাই লিখিত অভিযোগ দিতেন। তবে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি নজরে আসেনি বলে জানান ওসি।