রাজশাহীতে চুরির অভিযোগে ভ্যানচালককে নির্যাতন করে হত্যা: ৬ আসামি গ্রেপ্তার
রাজশাহীর বাগমারায় চুরির অভিযোগে নির্যাতন চালিয়ে ভ্যানচালক ওমর ফারুককে (৩৯) হত্যা মামলার ৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নাটোর থেকে তাঁদের গ্রেপ্তারের পর পুলিশে সোপর্দ করে র্যাব-৫।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন: বাগমারার দেউলা গ্রামের রেজাউল করিম (৪৭) ও হাবিবুর রহমান (৫৫), মাঝিগ্রামের আবদুল মতিন (৪০), দরগামড়িয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক ড্রাইভার (৪০), ভবানীগঞ্জ গ্রামের চা–দোকানি আসাদুল ইসলাম (৩৬) ও মধুপুর গ্রামের আবদুল হান্নান (৩৮)। এ নিয়ে মামলাটিতে মোট ৮ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলো।
র্যাব ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের একাধিক স্বজনের সূত্রে জানা গেছে, ওরম ফারুক হত্যা মামলার ৬ আসামি উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনের জন্য গতকাল রাতে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে র্যাব-৫–এর একটি দল নাটোরে অবস্থান নেয়। সেখানে পৌঁছালে দলটি পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাঁদের আটক করে। পরে রাতেই তাঁদের বাগমারা থানায় হস্তান্তর করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাগমারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু জাহিদ শেখ প্রথম আলোকে বলেন, র্যাবের হাতে আটক ৬ আসামিকে এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। দুপুরে আদালতে তোলা হবে। পলাতক মুরগি মুকুলসহ অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ওমর ফারুকের বাবা চানপাড়া গ্রামের মোসলেম সরদার বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা এজাহারভুক্ত আসামি।
এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার ভবানীগঞ্জ সিএনজিস্ট্যান্ডে তাঁর ছেলে ওমর ফারুক অটো ভ্যান রেখে প্রস্রাব করতে যান। ফিরে এলে সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন তাঁকে আটক করেন। তাঁদের নির্দেশে সমিতির সদস্যরা ওমর ফারুককে লোহার রড দিয়ে পেটাতে থাকেন। একপর্যায়ে ওমর ফারুক মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে একটি প্রাচীরের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে নির্যাতন করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, নির্যাতনের একপর্যায়ে ওমর ফারুকের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। পরে ওমর ফারুকের কাছ থেকে গাঁজা উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে আসামিরা বাগমারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞাকে জানান। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ওমর ফারুককে ১০০ টাকা অর্থদণ্ড ও ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এরপর ওমর ফারুককে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী কারাগারে পাঠায় পুলিশ। সেখানে অসুস্থ হলে পরদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার ভাষ্য, ওমর ফারুক মাদকাসক্ত ছিলেন। মাদকের টাকা জোগাড়ের জন্য ছোটখাটো চুরি করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে চুরির মামলাও আছে। ঘটনার দিন ভবানীগঞ্জ সিএনজিস্ট্যান্ডের অদূরে থাকা একটি অটোরিকশা থেকে ব্যাটারি চুরি করে পালাতে গিয়ে লোকজনের হাতে ধরা পড়েন তিনি।