বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই পর্যটকের ঢল, বিকেলে প্রতিমা বিসর্জন উৎসব

বৈরী আবহাওয়া ও ৩ নম্বর সতর্কসংকেতের মধ্যেও কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। আজ বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন উৎসব। কয়েক লাখ পর্যটকের উপস্থিতিতে এই উৎসব ঘিরে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা।

বৈরী আবহাওয়ায় কক্সবাজার সাগরের উপকূল উত্তাল। থেমে থেমে চলছে ঝড়-বৃষ্টি। সবকিছু উপেক্ষা করে সৈকতে সমবেত হয়েছেন লাখো পযটক। গতকাল বিকালে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টেছবি: প্রথম আলো

বুধবার সারা দিনই মেঘলা আকাশ আর ঝরঝরে বৃষ্টির দখলে ছিল কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। বঙ্গোপসাগরের ঢেউও ছিল অস্বাভাবিক উঁচুতে। সেই সঙ্গে গর্জন তো আছেই। এই বৈরী পরিবেশও থামাতে পারেনি পর্যটকদের উচ্ছ্বাস। বৃষ্টিতে ভিজে, সৈকতের বালুচরের গড়াগড়ি ও হাঁটুপানিতে লাফালাফি সব মিলিয়ে উৎসবে মেতে ছিল সৈকত।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সেই সৈকতেই অনুষ্ঠিত হবে প্রতিমা বিসর্জন উৎসব। দুর্গাপূজার ছুটিকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে কয়েক লাখ পর্যটকের ঢল নেমেছে সেখানে। বর্ণাঢ্য আয়োজনে এই বিসর্জন দেখতে এই ভিড় আরও বাড়বে বলে ধারণা স্থানীয় প্রশাসনের।

সৈকতে পর্যটকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে সৈকতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। তবে দুর্গাপূজা উপলক্ষে চার দিনের ছুটিতে চার-পাঁচ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে। এর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ প্রতিমা বিসর্জন উৎসব উপভোগ করবেন। প্রতিমা বিসর্জন উৎসব সুন্দর ও নির্বিঘ্ন করতে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

গত বছরের প্রতিমা বিসর্জন উৎসবে অন্তত তিন লাখ মানুষের উপস্থিতি হয়েছিল বলে জানান কক্সবাজার হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এবারের উৎসবে আরও বেশি মানুষের সমাগম ঘটতে পারে। ইতিমধ্যে শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট কটেজের ৯৬ শতাংশ কক্ষ বুকিং রয়েছে। এসব হোটেলের দৈনিক ধারণক্ষমতা দেড় লাখের বেশি।  

‘সৈকতের তিন স্তরে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পূজামণ্ডপগুলোতে র‌্যাব, সেনা, বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ও নজর রাখা হয়েছে।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান

জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ সভাপতি ( ভারপ্রাপ্ত) উদয় শংকর পাল প্রথম আলোকে বলেন, এবারের প্রতিমা বিসর্জন উৎসবে তিন লাখ মানুষের উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে এক লাখ হিন্দু ধর্মের। বাকি দুই লাখ পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দা। দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন উৎসব হওয়ায় অনেকে দেখতে ছুটে আসেন।

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তর কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টির কারণে কক্সবাজার উপকূল উত্তাল হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার উপকূলকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

পূজার ছুটিতে কক্সবাজারের সৈকতে লাখো মানুষের ঢল। আজ এ সৈকতেই হবে দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বিসর্জন উৎসব। গতকাল বিকেলে সুগন্ধা পয়েন্টে
ছবি: প্রথম আলো

বৃষ্টি আর ঝুঁকি নিয়েই উল্লাস

গতকাল বুধবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, সৈকতের সুগন্ধার উত্তরে সিগাল-লাবনী থেকে দক্ষিণে কলাতলী পর্যন্ত চার কিলোমিটার জুড়ে পর্যটকদের উল্লাস। মেঘলা আকাশ, ঝোড়ো হাওয়া আর মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণ গুপ্তখাল-কোনো কিছুই ভ্রমণকারীদের আনন্দে ভাটা দিতে পারেনি।

ঢাকা থেকে আসা কলেজছাত্রী সিদরাতুল মুনতাহা তাঁদের একজন। গতকাল তিনি যখন  বৃষ্টিতেই ভিজেই সৈকতে নেমেছিলেন তাঁর কাছেই লাল নিশান উড়ছিল।  বীচকর্মীরাও সতর্ক বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেন পানিতে নেমেছেন-জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে  বলেন, ‘লোনাজলে গোসল করতে এসেছি। ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেওয়া হয়েছি জানি, তবে কম পানিতে নামছি, কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

আরও পড়ুন

পুলিশ ও লাইফগার্ডদের তথ্য অনুযায়ী, ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার সৈকতের মধ্যে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় (কলাতলী থেকে লাবনী) লাইফগার্ড সেবা রয়েছে। বাকি দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটোয়ারটেক থেকে টেকনাফ সৈকত পর্যন্ত-কোথাও এ সেবা নেই। তাই তারা পর্যটকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি  সি-সেফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘কলাতলী থেকে সুগন্ধা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে ছোট-বড় ১০ থেকে ১২টি গুপ্তখাল সৃষ্টি হয়েছে। সিগাল ও লাবনী এলাকার সৈকতে এ খাল সবচেয়ে বেশি। সেখানে লাল নিশানা টাঙালেও অনেকে ঝুঁকি নিয়ে পানিতে নামছেন। গত তিন দিনে অন্তত ২৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।’

যেভাবে  হবে প্রতিমা বিসর্জন

জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের তথ্যমতে, এবার জেলার ৯টি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভাতে ৩১৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে।আজ বেলা দুইটার দিকে জেলার উখিয়া, ঈদগাঁও, রামু ও সদর উপজেলার পিএমখালী, চৌফলদন্ডী, খুরুশকুল এলাকার প্রতিমা ট্রাক বোঝাই করে শহরে আনা হবে। পরে পৌরসভার ১১টি মণ্ডপের প্রতিমাসহ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সৈকতের লাবনী পয়েন্টে নেওয়া হবে। বিকেল তিনটার সৈকতের  বিজয়মঞ্চে শুরু হবে আলোচনা সভা। বিকেল পাঁচটায় মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে সকল প্রতিমা বঙ্গোপসাগরে বিসর্জন দেওয়া হবে।

পরিষদের জেলা সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) উদয় শঙ্কর পাল প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  তবে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার প্রতিমা সেখানকার মাতামুহুরি নদীতে বিসর্জন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ। এ ছাড়া কুতুবদিয়া ও টেকনাফের প্রতিমা সেখানকার সৈকতে বিসর্জন দেওয়া হবে। উখিয়ার কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা  আশ্রয়শিবিরের হিন্দু শরণার্থীদের  প্রতিমা উখিয়ার প্রতিমা বহরের সঙ্গে কক্সবাজার সৈকতে আনা হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, সৈকতের তিন স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পূজামণ্ডপগুলোতে র‌্যাব, সেনা, বিজিবি,পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও নজরদারি রাখা হয়েছে।  সুন্দরভাবে বিসর্জন উৎসব পালিত হবে বলে তিনি আশা করছেন।