‘শেষবারের মতো ছেলের মুখ দেখতে চাই’

সৌরভ মাঝি
ছবি: সংগৃহীত

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভবন থেকে পড়ে মারা যাওয়া ছেলে সৌরভ মাঝির (২৩) মুখ শেষবারের মতো দেখার আকুতি জানিয়েছেন তাঁর বাবা সায়েদ মাঝি। আজ বুধবার সকালে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মাঝিকান্দি গ্রামে গেলে ছেলেহারা বাবার এমন আকুতির কথা জানা যায়।

আক্ষেপ করে সায়েদ মাঝি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। সংসারের অভাব দূর করতে ছেলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছিল। সে লাশ হয়ে ফিরবে, তা ভাবতে পারছি না। এখন ওর মাকে কী জবাব দেব? অন্তত শেষবারের মতো ছেলের মুখ দেখতে চাই। সরকারি উদ্যোগে যেন আমার ছেলের লাশ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়।’

আজ সকালে মাঝিকান্দি গ্রামে সৌরভদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সৌরভের মা সেলিনা বেগম ও বড় বোন শারমিন আক্তার কান্না করছেন। তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্বজনেরা।

সৌরভের ফুফাতো ভাই জামিল আহসান বলেন, ‘আমাদের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে সৌরভের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরেছি। ওর ভিসার মেয়াদ ছিল। কেন সে শারজা থেকে পালিয়ে অন্য শহরে গিয়েছিল, তা আমরা বুঝতে পারছি না। পুলিশ আসার খবরে ঘাবড়ে ভবন থেকে পালাতে গিয়ে লাফ দিয়েছিল সৌরভ। পরে নিচে পড়ে মৃত্যু হয়। ওর এমন মৃত্যু মানতে পারছি না।’

আরও পড়ুন

গত রোববার ভোররাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রোলা শহরে একটি ভবন থেকে পড়ে মারা যান বাংলাদেশি তরুণ সৌরভ মাঝি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ওই তরুণের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। নিহত সৌরভ মাঝি নড়িয়া উপজেলার নশাসন ইউনিয়নের মাঝিকান্দি এলাকার সায়েদ মাঝি ও সেলিনা বেগম দম্পতির ছেলে। স্থানীয় মাঝিরহাট বাজারের চায়ের দোকানের আয় দিয়ে সায়েদ মাঝির অভাব–অনটনের সংসার চলছিল। সংসারের অভাব দূর করার জন্য উন্নত জীবনের আশায় বড় ছেলে সৌরভ মাঝি দুই বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে জীবিকার তাগিদে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান সৌরভ মাঝি। এরপর তিনি শারজা শহরে রংমিস্ত্রির কাজ নেন। যে কোম্পানির হয়ে সৌরভ কাজ করতেন, সেই কোম্পানি নিয়মিত বেতন দিত না। তাই কিছুদিন আগে শারজা শহর থেকে রোলা শহরে চলে যান। রোববার রাতে সৌরভ ও তাঁর দুই বন্ধু রোলা শহরের একটি ভবনে অবস্থান করছিলেন। তখন ওই ভবনে পুলিশ হানা দেয়। ওই ভবন থেকে পাশের একটি ভবনে লাফ দিয়ে পালাতে গিয়ে নিচে পড়ে যান সৌরভ। পরে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আমিরাতে থাকা এক স্বজন গতকাল বাংলাদেশে পরিবারের কাছে সৌরভের মৃত্যুর খবর জানান।

সৌরভরা দুই ভাই ও এক বোন। বোনের বিয়ে হয়েছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে সৌরভ বড় ছিলেন। ছোট ভাই শান্ত মাঝি স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে। শান্ত মাঝি বলে, ‘ভাই পড়ালেখা করত। সংসারে অভাব ছিল, পড়ালেখার খরচ জোগাড় করতে কষ্ট হতো। তাই আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় তাঁকে বিদেশে পাঠানো হয়। তার পাঠানো টাকায় আমার পড়ালেখার খরচ জোগাড় হতো। সংসার চলত। ভাইয়ের মৃত্যুতে আমাদের পরিবারে অন্ধকার নেমে এল।’

নশাসন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদার জানান, সৌরভের মৃত্যুর খবর গতকাল সকালে পেয়েছেন। তাঁর লাশ যাতে দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়, সে জন্য ইউএনওকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৈদ্য প্রথম আলোকে বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি এক শ্রমিক মারা গেছেন। তাঁর লাশ কোথায়, কী অবস্থায় আছে, তা জানা নেই। তবে সেখানে দূতাবাসে যোগাযোগ করে লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।