‘বাবার খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পেরেছি, আমার আইনজীবী হওয়া সার্থক’

আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে বাহাদুর
ছবি: প্রথম আলো

‘বাবার খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পণ করেছিলাম আইনজীবী হওয়ার পর। অনেক কষ্ট করে আইনজীবী হয়েছি। আদালতে লড়ে বাবার খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পেরেছি। আমার আইনজীবী হওয়া সার্থক হয়েছে। এক দিন, দুই দিন নয়; বাবার হত্যার বিচার পেতে ২৯ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে আমার পরিবারকে।’ কথাগুলো বলছিলেন আইনি লড়াইয়ে যুক্ত থেকে ২৯ বছর পর বাবার হত্যার বিচার পাওয়া গাজীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে বাহাদুর।

আজ মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর জজ কোর্টের পাশে আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমানের চেম্বারে বসে কথা হয়। তখন তিনি এসব কথা বলেন। আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমানের বাবা সুলতান উদ্দিন ১৯৯৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে খুন হন। তাঁর বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেড়াইদেরচালা এলাকায়।

সুলতান উদ্দিনকে যখন হত্যা করা হয়, তখন তাঁর ছোট ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানের বয়স ছয় বছর। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমার বয়স তখন ছয় বছর। তেমন কিছু বোঝার বয়স ছিল না। আমার মা শিউলি বেগম ও বড় ভাই (এখন একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক) আবুল কালাম আজাদসহ অন্য ভাইয়েরা হত্যার বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। অনেক সময় মা আমাকে সঙ্গে করে আদালতে যেতেন।

আরও পড়ুন

মা আর ভাইদের সেই কষ্ট দেখে বড় হয়ে উঠেছি। ২০০৭ সালে ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবিতে ভর্তি হই। ২০১২ সালে পাস করে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করি। ২০১৪ সালে সনদ পেয়ে পুরোপুরি আইন পেশা শুরু করি। তখন থেকে বাবার হত্যার ন্যায়বিচারের জন্য মামলাটি লড়ে আসছি। অবশেষে ন্যায়বিচার পেয়েছি।’

ভুক্তভোগী পরিবারের একজন হিসেবে আইনি লড়াইয়ের সেই সময়গুলো মনে করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাবার হত্যা মামলায় বেশ কয়েকজন সাক্ষী ছিলেন। তাঁরা আসামিপক্ষের ভয়ে কোনো দিন আদালতে আসতে পারেননি সাক্ষ দিতে। আমি আইনজীবী হওয়ার পর থেকে তাঁরা আদালতে আসা শুরু করেন।

সাক্ষীকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল আসামিপক্ষ। পরে আমাদের তৎপরতায় তাঁকে সাক্ষী হিসেবে বাদ দেওয়া হয়। এই মামলার আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মাইন উদ্দিন ব্যাপারীকে অব্যাহতি দিয়ে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিল।

আমরা নারাজি দিলে আবার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।’ সুলতান উদ্দিন হত্যা মামলায় তাঁর দুই ভাই মো. মাইন উদ্দিন ব্যাপারী ও আবুল কাসেম ব্যাপারীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে স্থানীয় দুলাল উদ্দিন, মাইন উদ্দিন, মো. আজিজুল হক ও নিহতের সৎভাই আ. মান্নানকে।

বেকসুর খালাস পেয়েছেন স্থানীয় মো. গিয়াস উদ্দিন। আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাবার মামলা থেকে জীবনে অনেক কিছু শিখেছি। অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমাদের মতো অনেক পরিবার বিচারের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন থেকে আমি এমন পরিবারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।’