নাটোরের গুরুদাসপুরে পাশাপাশি অবস্থিত দুটি বিদ্যালয়ের একটি মাঠে সম্মেলন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। আজ মঙ্গলবার এ সম্মেলনে উচ্চশব্দে মাইক বাজানোর কারণে ছুটি দিতে বাধ্য হয় গুরুদাসপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা নির্ধারিত এসএসসির একটি নির্বাচনী পরীক্ষাও স্থগিত করেছে। অন্যদিকে দরজা-জানালা বন্ধ করে পাঠদান করতে হয় গুরুদাসপুর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের।
এদিকে সম্মেলনকে জাঁকজমক করতে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত মাইক স্থাপন করা হয়েছিল। সম্মেলনস্থল থেকে ২০০ গজের মধ্যে রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজে এইচএসসি পরীক্ষা হয়েছে। প্রায় ৫০০ মিটার দূরে বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজেও এইচএসসি পরীক্ষা হয়েছে। শব্দদূষণের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় দুই কলেজ কেন্দ্রের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার আগে সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সম্মেলনের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে পরিস্থিতি নজরে আসে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের। সভাস্থলে অন্য নেতাদের উপস্থিতিতেই উঠে এসে মাইক ধরেন তিনি। পাবলিক পরীক্ষা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বিষয়টি বিবেচনা করে ২০টি মাইকে সম্প্রচার বন্ধ করে দেন তিনি। এ সময় আয়োজকদের উদ্দেশে কামাল হোসেন বলেন, পাবলিক পরীক্ষা ও বিদ্যালয়ের পাঠদানের বিষয়টি মাথায় রেখে মাঠে সম্মেলনের আয়োজন করা উচিত ছিল, প্রয়োজনে পরেও হতে পারত এ সম্মেলন।
কামাল হোসেনের এমন উদ্যোগে আয়োজক কমিটির নেতারা ছিলেন নিশ্চুপ। তবে সম্মেলনস্থল ও আশপাশে উপস্থিত অনেকে স্বস্তি প্রকাশ করেন। পরে মাঠে থাকা সাউন্ডসিস্টেম চালু রেখে সম্মেলন চলতে থাকে।
এদিকে সম্মেলন ঘিরে মাঠের শব্দদূষণ ও কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে বিঘ্নিত হয় পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান। এ কারণে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার নির্ধারিত একটি নির্বাচনী পরীক্ষা স্থগিত করেন। সমস্যায় পড়তে হয় একই মাঠে অবস্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের।
রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মাহাতাব উদ্দিন বলেন, কলেজটিতে ৩০৩ পরীক্ষার্থী ছিলেন। হিসাববিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছিল। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ওই পরীক্ষা নেওয়া হয়। কলেজের সামনে ও পেছনে সকাল থেকে দুটি মাইক বাজানো হচ্ছিল। মারাত্মক শব্দদূষণের কারণে শিক্ষার্থীরা অস্বস্তিবোধ করছিলেন। তাঁদের অভিযোগের কারণে দরজা-জানালা বন্ধ করে পরীক্ষা নিতে হয়েছে।
বিলচলন শহীদ সামসুজোহা কলেজের কয়েক শিক্ষক বলেন, বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা বাস-ট্রাক-ভটভটিতে করে উপজেলা সদরের সম্মেলনে যোগদান করেন। তাঁদের যানবাহনগুলো কলেজগেটের সামনের হেলিপ্যাডে রাখায় মারাত্মক যানজট ও শব্দদূষণ হয়। এ ছাড়া কলেজের অদূরে মাইকের দুটি হর্ন থাকার কারণে পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটে।
বিদ্যালয় দুটির শিক্ষকেরা বলছেন, মাঠে সম্মেলন হবে জানা ছিল তাঁদের। আয়োজক কমিটি শিক্ষার্থীদের বিষয়টি ভাবেননি। সরকারি দলের সম্মেলন হওয়ার কারণে তাঁরা ছিলেন অসহায়। তবু নিয়ম রক্ষার কারণে বিদ্যালয় খোলা রাখতে হয়েছে। শব্দদূষণের মধ্যেই পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোর্তজা বলেন, সম্মেলনকে ঘিরে ব্যাপক জনসমাগম, সাউন্ডসিস্টেম ও মাইকের উচ্চশব্দের কারণে দরজা-জানালা বন্ধ করে ক্লাস নিতে হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ না থাকায় বিদ্যালয় ছুটি দেওয়া যায়নি।
সরকারি পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মারাত্মক শব্দদূষণে টিকতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থীই বিদ্যালয় ত্যাগ করে। পরিস্থিতির কারণে বিদ্যালয় ছুটি দিতে হয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আখতার হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ উপজেলার শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। এটা দুঃখজনক।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায় বলেন, এ ব্যাপারে তিনি অবগত নন। তবে খোঁজ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।