‘সেমিফাইনালে মেসি তো জাদু দেখাইছে, কাপ মেসির হাতেই যাবে’

দিনাজপুর শহরের কালুর মোড় এলাকায় বড় পর্দায় বিশ্বকাপ খেলা দেখানো হয়। আর্জেন্টিনা–ফ্রান্স ফাইনাল সামনে রেখে সেখানে জমেছে ফুটবলপ্রেমীদের আড্ডা। আজ শনিবার সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুর শহরের জেলমোড় এলাকায় শাহিনের চায়ের দোকান। আজ শনিবার সন্ধ্যায় সেখানে ১০-১২ জনের জটলা। কেউ কাউকে তেমন চেনেন না। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলের আলোচনায় প্রত্যেকেই সরব। কে জিতবে ফাইনালে, কার হাতে উঠবে ট্রফি? প্রশ্নটা শুনতেই সরব হলেন মাহফুজ হোসেন (৩৬)।

তিনি বললেন, ‘মেসি তো মেসিই, দ্বিতীয় মেসি আলভারেজও আছে। সেমিফাইনালে দুইটা গোল করছে। অবশ্যই কাপ আর্জেন্টিনাই নিবে। সেমিফাইনালে মেসি তো জাদু দেখাইছে। মাঠের মধ্যে দুই চার দশজন প্লেয়ারকে কাটানোর ক্ষমতা আছে মেসির, অন্য কোনো খেলোয়াড়ের মধ্যে সেটা নাই। কাপ হানড্রেড পারসেন্ট (১০০ ভাগ) মেসির হাতেই যাবে।’

বিরল উপজেলার দইগাছি এলাকার বাসিন্দা মাহফুজ (৩৫)। শহরের মুন্সিপাড়ায় একটি দোকানের কর্মচারী তিনি। আলাপচারিতায় বলেন, ব্রাজিল সমর্থন করেন, কিন্তু ভালোবাসেন মেসির খেলা। মেসির জন্যই খেলা দেখেন। ২০০০ সালের পর থেকে আর্জেন্টিনার যত আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে, প্রায় সব খেলা দেখা হয়েছে তাঁর। এবারের বিশ্বকাপে ৩৪টি ম্যাচ দেখেছেন। তাঁর বিশ্বাস, ফাইনালে মেসির হাতেই যাবে ট্রফি।

শনিবার বিকেল থেকে দিনাজপুর শহরের কালুর মোড়, চুড়িপট্টি, সুইহারি, উপশহর, বালুয়াডাঙ্গা, বালুবাড়ি এলাকা ঘুরে ফুটবলপ্রেমীদের সঙ্গে কথা হয়। ফাইনাল খেলা উপলক্ষে দিনাজপুর শহরে অর্ধশতাধিক জায়গায় খেলা দেখার আয়োজন করা হয়েছে। খেলা শেষে খিচুড়ি রান্না হবে। তার প্রস্তুতিও চলছে।

এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা রোববার রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে। এর এক দিন আগেই শুরু হয়েছে প্রিয় দল আর প্রিয় খেলোয়াড় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কেউ আর্জেন্টিনা দলকে ভালোবাসেন। আবার কেউ ব্রাজিল দলকে ভালোবাসলেও মেসির ভক্ত। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল ছিটকে পড়ায় ফ্রান্সের পক্ষ নিয়েও কথা বলছেন কেউ কেউ।

আরও পড়ুন

বিকেলে শহরের চুড়িপট্টি এলাকায় কথা হয় সবুজ ইসলামের (৪৫) সঙ্গে। রাস্তার পাশেই টানানো হয়েছে সাদা পর্দা। ওপরে তিনতলা বাড়িতে ঝুলছে প্রিয় দল আর্জেন্টিনার পতাকা। সবুজ বলেন, প্রতিবার বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন করেন তাঁরা। এবারও শুরু থেকেই আয়োজন করেছেন। ফাইনালের দিন খিচুড়ি রান্না হবে। তারই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কত টাকা খরচ হবে। হিসাব করে নিজেরা চাঁদা দিয়ে খাবারদাবারের আয়োজন করবেন।

শহরের কালুর মোড় এলাকায় খেলা দেখার আয়োজন করেছেন পান্না রহমান (৪২)। ৭৫ বছর বয়সী বটগাছের গোড়ায় টানানো হয়েছে সাদা পর্দা। তুলনামূলকভাবে কালুর মোড়ে খেলা দেখার আয়োজনটা বেশ জমজমাট হয়।  চৌরাস্তার আশপাশে শতাধিক ছাত্রাবাস আছে। দিনাজপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরাও এখানে খেলা দেখতে ভিড় করেন। মোড়ের মুদিদোকানি শাওন বলেন, ‘পান্না ভাই প্রজেক্টর, বড় পর্দা এসব জোগাড় করে দিয়েছেন। আগামীকাল এখানে বড়সড় খাবারের আয়োজান করা হবে। ইতিমধ্যে নিজেরা চাঁদা দিয়েছি। মেসের ছাত্রদের কাছেও কিছু কালেকশন করা হয়েছে। কালুর মোড়ে খেলা দেখার আনন্দই আলাদা।’

আরও পড়ুন

কালুর মোড়ে খেলা দেখেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগ রানা। গত বিশ্বকাপ থেকে ফ্রান্স দলের সমর্থক তিনি। সোহাগ বলেন, আফসোস একটা থেকে গেল ইনজুরির কারণে পল পগবার মতো একটা ভালো খেলোয়াড় খেলতে পারলেন না। তারপরও ফ্রান্স অনেকটা ফর্মে আছে। দেখবেন অনেকের আনন্দ মাটি করে দিয়ে ফ্রান্সই কাপ নিয়ে নেবে।

শহরের বড় বন্দর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন খাদ্য কর্মকর্তা ভবতোষ বিশ্বাস। বাড়ির সামনে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ‘ঢোল’ এর স্বত্বাধিকারী অমিত রায় বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন করেছেন। প্রায় সব কটি খেলা এখানেই দেখেছেন ভবতোষ। শনিবার সন্ধ্যায় কথা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ব্রাজিল সাপোর্ট করতাম। কিন্তু এবার খেলোয়াড়েরা কেমন যেন অহংকারী হয়ে উঠেছিল।’ ফাইনালে দুই দলেরই জেতার সম্ভাবনা ফিফটি–ফিফটি বলে মনে করেন তিনি।