কুমারখালীতে চুরির অভিযোগে ভ্যানচালককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, দুজন কারাগারে

কুমারখালীতে চুরির অভিযোগ তুলে ভ্যানচালককে মারধর ও চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তিছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় চুরির অভিযোগ তুলে এক ভ্যানচালক তরুণকে মারধর ও চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার তিন দিন পর আজ শনিবার ভুক্তভোগী মো. নাঈম শেখ (২৪) বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। আজ দুপুরে তাঁদের এজাহারনামীয় আসামি করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা গ্রামের মো. রেজমত শেখ (৪৫) ও একই গ্রামের মিরাজুল ইসলাম (৪০)।

ভুক্তভোগী নাঈম শেখ উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা গ্রামের মধ্যপাড়া এলাকার মৃত মানিক শেখের ছেলে। পেশায় তিনি একজন ভ্যানচালক। গত বুধবার রাতে তাঁর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ তুলে মারধর ও চুল কেটে দেওয়া হয়। পরে ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে গতকাল প্রথম আলোতে ‘কুমারখালীতে চুরির অভিযোগে তরুণকে মারধর ও চুল কাটার ভিডিও ফেসবুকে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার রাত ১০টার দিকে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা বাজার থেকে গোপগ্রামে যাওয়ার কথা বলে নাঈমের ভ্যানটি ভাড়া নেন অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি। পথে ওই ব্যক্তির সঙ্গে আরও দুজন যুক্ত হন। তাঁরা রাস্তায় ভ্যানে জোর করে কলাভর্তি একটি বস্তা তোলেন। তখন স্থানীয় লোকজন ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার দিলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ভ্যান থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যান। সে সময় স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করে ভ্যানচালক নাঈমকে আটক করেন এবং মারধর করে চুল কেটে দেন। ঘটনার সময় জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. খোকন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ভ্যানচালককে মারধর ও চুল কাটার ৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন

মামলার বাদী নাঈম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একজন ভ্যানচালক। রাত হওয়ায় অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে তিনি অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তিদের ভ্যানে ওঠান। তাঁরাও অসম্মতি জানাননি। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটবে তিনি বুঝতে পারেননি। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি থাকায় থানায় মামলা করতে দেরি হয়েছে। তিনি ঘটনায় জড়িত সবার শাস্তির দাবি করেন।

মারধর ও চুল কেটে দেওয়ার বিষয়ে ইউপি সদস্য মো. খোকন বলেন, তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। কিন্তু উৎসুক জনতার চাপাচাপিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। সে জন্য অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। তাঁর ভাষ্য, মানুষের উপকার করতে গিয়ে যদি বিপদে পড়তে হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কেউ কারও উপকার করতে যাবেন না।

বাদী এজাহার দিতে দেরি করায় মামলা রুজু করতে দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভ্যানচালককে মারধর ও চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় থানায় আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।