‘ঘুষের’ টাকাসহ গ্রেপ্তার বিসিক কর্মকর্তা কারাগারে, অভিযোগকারীর ওপর হামলার ঘটনায় মামলা

দুদকের একটি দল বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে ঘুষের টাকাসহ বিসিক কর্মকর্তা মনির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে
ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরে ‘ঘুষের’ টাকাসহ গ্রেপ্তার বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মনির হোসেনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

এদিকে শরীয়তপুর বিসিক শিল্পনগরীর ব্যবসায়ী এসকেন্দার ঢালীকে হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগে সদরের পালং মডেল থানায় আজ সকালে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদার, তাঁর ভাই কবির চৌকিদার, পালং ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সেলিম শেখসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে। বিসিক কর্মকর্তা মনির হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দিয়েছিলেন এসকেন্দার ঢালী।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় মাদারীপুর সূত্র জানায়, শরীয়তপুর শহরের প্রেমতলা এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীতে উপব্যবস্থাপক হিসেবে মোহাম্মদ মনির হোসেন ২০২১ সাল থেকে কর্মরত। সম্প্রতি তাঁকে বরগুনা জেলায় বদলি করা হয়েছে। ৩০ মার্চের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি সেখানে যোগ দেননি। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিল্পমালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যবসায়ী এসকেন্দার ঢালী। বৃহস্পতিবার রাতে
ছবি: প্রথম আলো

দুদকের এজাহার সূত্র জানায়, চিকন্দী এলাকার আবুল কালাম ঢালী ২০০৯ সালে মেসার্স ঢালী মিনারেল ওয়াটার নামের একটি কারখানা স্থাপনের জন্য ৪ হাজার ৫০০ বর্গফুটের একটি প্লট বরাদ্দ পান। দীর্ঘদিন কারখানা চালু না করায় বিসিকের প্রধান কার্যালয় থেকে তাঁর প্লটের বরাদ্দ বাতিল করে দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তি বর্তমানে ওমানপ্রবাসী। তিনি তাঁর চাচাতো ভাই এসকেন্দার ঢালীকে ব্যবসা পরিচালনার জন্য আমমোক্তার নিযুক্ত করেন। এসকেন্দার ঢালীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই প্লট পুনরায় তাঁদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

এরপর ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করে মেসার্স বাংলাদেশ হারবাল অ্যান্ড স্পাইসেস প্রোডাক্টস নামকরণের জন্য আবেন করেন এসকেন্দার ঢালী। ওই আবেদনপত্র বিসিকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য উপব্যস্থাপক মনির হোসেন ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। বিভিন্ন সময় এসকেন্দার ৪৭ হাজার টাকা মনির হোসেনকে দিয়েছেন। বাকি টাকা দেওয়ার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হয়। তখন এসকেন্দার দুদকে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক গতকাল বৃহস্পতিবার বিসিক কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে মনির হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের সময় হাতেনাতে আটক করা হয়।

পরে দুদক মাদারীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান বাদী হয়ে মামলা করেন। গতকাল রাতে তাঁকে পালং মডেল থানাহাজতে রাখা হয়। আজ দুপুর ১২টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা তাঁকে থানা থেকে জজ আদালতে নিয়ে যান। আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

দুদকের পিপি রাশেদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্টেট তাঁকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। দুদকের মামলার বিচারকাজ করেন জেলা ও দায়রা জজ। আগামী রোববার তিনি এ মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। তখন আসামিপক্ষ জামিন চাইতে পারবে।

আরও পড়ুন

এদিকে বিসিক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের পর অভিযোগকারী এসকেন্দার ঢালীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এসকেন্দার ঢালী বিসিক শিল্পনগরী থেকে জেলা শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। কোটাপাড়া মোড় নামক স্থানে এলে কয়েকজন ব্যক্তি তাঁকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে পাশের একটি বিদ্যালয়ের পেছনে নিয়ে যান। সেখানে হাতুরি দিয়ে তাঁকে পেটানো হয়। পিটিয়ে তাঁর বাঁ পা ভেঙে দেওয়া হয়। হামলাকারীদের পরনে ছিল মাস্ক। দুর্বৃত্তরা তাঁকে মারধর করার পর একটি অটোরিকশায় তুলে দেন। পরে তাঁর স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে বিকেল ৫টার দিকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

হামলার ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদারসহ অন্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁদের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এসকেন্দারের স্ত্রী সুমি আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীর বাঁ পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাঁর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যাব। থানায় মামলা করা হয়েছে। আসামিরা প্রভাবশালী। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। পুলিশের কাছে অনুরোধ, তারা যেন দ্রুত আসামিদের আইনের আওতায় নেয়।’

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এসকেন্দার ঢালী বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।