নরসিংদীতে বালুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ব্যক্তির মৃত্যু

লাশ
প্রতীকী ছবি

একটি প্রকল্পের বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল আলোকবালীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম রেদন মিয়া (৪৮)। তিনি উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের খোদাদিলা গ্রামের মৃত আবু তাহেরের ছেলে।

গত বৃহস্পতিবার ভোরে আলোকবালী ইউনিয়নের খোদাদিলা গ্রামে বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ ও টেঁটাবিদ্ধ হয়ে অন্তত ২০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ দুজন ও টেঁটাবিদ্ধ ছয়জনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গতকাল মারা যাওয়া রেদন মিয়া ওই তালিকায় ছিলেন না। সংঘর্ষের পর তাঁকে সরাসরি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে তিনি মারা যান।

খোদাদিলা গ্রামের যুবলীগ কর্মী জাকির হোসেন ও ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিনের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। জাকির ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদ উল্লাহর কর্মী। জয়নাল আবেদিনের পক্ষে রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মেঘনা নদী ও এর শাখা নদীর নাব্যতা বাড়ানোর জন্য দুই মাস আগে বালু উত্তোলন শুরু হয়। প্রকল্পের নীতি অনুযায়ী, এসব বালু নদীর পাশে রাখার কথা থাকলেও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ইউনিয়নের খোদাদিলাসহ বিভিন্ন গ্রামের ফসলি জমি, পুকুর, ডোবাসহ বিভিন্ন স্থান ভরাট করা হচ্ছে। ভরাট করা বালুর জন্য প্রতি শতাংশে জয়নাল গ্রুপকে ১০-১৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। এদিকে এলাকার বাইরে থাকা জাকির গ্রুপও এর ভাগ চায়। ওই প্রকল্পের বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে কিছুদিন ধরে জাকির গ্রুপ ও জয়নাল গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। গত বৃহস্পতিবার ভোরে জাকির গ্রুপের লোকজন এলাকায় প্রবেশ করতে গেলে দুই পক্ষই টেঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন গুলিবিদ্ধ ও টেঁটাবিদ্ধ হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জয়নাল আবেদিন বলেন, মারা যাওয়া রেদন মিয়া তাঁর পক্ষের কর্মী ছিলেন। তাঁর লাশ বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্তের অপেক্ষায় আছে। তাঁর স্বজনেরা সেখানে লাশ হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছেন। লাশ হস্তান্তর হওয়ার পরই তাঁরা এলাকায় ফিরবেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অপর পক্ষের নেতা জাকির হোসেনের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার পর থেকেই তিনি এলাকাছাড়া। এ ছাড়া তাঁর পক্ষের নেতা-কর্মীরাও গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ।

আরও পড়ুন

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন জয়নাল আবেদিন। ওই মামলায় দুজন গ্রেপ্তার আছেন। তবে রেদন মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় নতুন করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, এ জন্য এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।