পড়াশোনার জন্য অদম্য জসিম পেলেন সহায়তা
পা দিয়ে দিয়ে লিখে উচ্চমাধ্যমিক পাস করা জসিম মাতুব্বরের পড়াশোনায় সহায়তা করার জন্য এগিয়ে এসেছে প্রশাসন। পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য নগরকান্দা উপজেলা প্রশাসন তাঁকে ৬০ হাজার টাকা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে নগরকান্দা উপজেলা কার্যালয়ের নিজ কক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনুল হক তাঁর হাতে ওই টাকা তুলে দেন। এ সময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরদার উপস্থিত ছিলেন।
জসিম উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের দিনমজুর মো. হানিফ মাতুব্বর ও গৃহিণী তছিরন বেগম দম্পতির ছেলে। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে জসীম সবার বড়। জন্মের পর থেকে জসিমের দুটি হাত না থাকলেও জীবনসংগ্রামে কখনো থেমে থাকেননি তিনি। পা দিয়েই যাবতীয় কাজ করে নজির সৃষ্টি করেছেন তিনি। পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন অদম্য এ মেধাবী।
বুধবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। জসিম ফরিদপুর সিটি কলেজের বিএম শাখা থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ২৯ পেয়ে পাস করেন।
জসিম মাতুব্বর বলেন, ‘পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পাস করার খবর পেয়ে ইউএনও স্যার আমাকে তাঁর অফিসে ডেকে নিয়ে প্রথমে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে আমাকে নগদ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন।’
জসীম বলেন, এই টাকা দিয়ে তিনি পেঁয়াজের জমি রাখবেন। সেই জমিতে ফসল ফলিয়ে যা আয় হবে, তা দিয়ে পড়ালেখার খরচ চালাবেন।
জসিম আরও বলেন, ‘আমার বাবা একজন কৃষক। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি জীবিকার তাগিদে নগরকান্দা বাজারের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে মনা টেলিকমে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করি। দুই হাত না থাকা সত্ত্বেও দোকানের মালিক সোহাগ ভাই (সোহাগ শেখ) আমাকে কাজ শিখিয়েছেন। আমি পুরোপুরি কাজ শিখে নিজে আয় করতে পারছি। আমি সবার কাছে দোয়া চাই। আমি যেন পড়াশোনা শেষ করে একটি সরকারি চাকরি পাই।’
মনা টেলিকমের মালিক সোহাগ শেখ বলেন, ‘প্রতিবন্ধী জসিমকে দেখে প্রথমে আমার অনেক মায়া লাগছিল। পরে তাকে আমার দোকানে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শিখতে বলি। এতে সে রাজি হলে তাকে আমি কাজ শিখিয়ে দিই। বর্তমানে জসিম পা দিয়েই দক্ষতার সঙ্গে মোবাইল সার্ভিসিং কাজ করে। পাশাপাশি কম্পিউটারের কিছু কাজও পারে। সেই সঙ্গে পড়ালেখাও চালিয়ে যাচ্ছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল হক বলেন, ‘মেধাবী জসিমের এইচএসসি পরীক্ষায় সফলতার গল্প আমি সংবাদমাধ্যমে শুনে আমি তাকে অফিসে ডেকে এনে ফুলে শুভেচ্ছা জানিয়েছি, মিষ্টি খাইয়েছি। আর্থিক অভাবের কারণে এই মেধাবীর উচ্চশিক্ষা যাতে থমকে না যায়, সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এককালীন আর্থিক সহায়তা দিয়েছি।’