পা দিয়ে লিখে অদম্য জসীমের এইচএসসি পাস

মায়ের সঙ্গে অদম্য জসীম
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরে পা দিয়ে লিখে জিপিএ-৪.২৯ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মেধাবী শিক্ষার্থী জসীম মাতুব্বর। ফরিদপুর সিটি কলেজের বিএম শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি এ ফল অর্জন করেন।

জসীম ফরিদপুরের নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের উত্তরপাড়ার কৃষক হানিফ মাতুব্বরের ছেলে। লেখাপড়ার পাশাপাশি জসীম কখনো তরমুজ আবার কখনো বাঙ্গি বিক্রি করেছেন। এ ছাড়া সংসারের বিভিন্ন কাজ করতেন তিনি। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। জন্ম থেকেই তাঁর দুই হাত নেই। তবে লেখাপড়ার প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ কোনো বাধা তাঁকে রুখতে পারেনি।

এর আগে ২০১৩ সালে পা দিয়ে লিখে প্রথমে পিইসি, ২০১৬ সালে জেএসসি, ২০১৯ সালে এসএসসি পাস করেন জসীম। তাঁকে নিয়ে পিইসি পরীক্ষার সময় ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘শেখাতে চায় জসীম’ এবং ২০১৬ সালের ২ নভেম্বর জেএসসি পরীক্ষার পর ‘পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

জসীম মাতুব্বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে সবার সঙ্গে মিশতে পারতাম না। মানুষ আমাকে হেয় করত। তবে পড়াশোনা করছি, পরীক্ষা দিচ্ছি, ভালোভাবে পাস করছি, যার কারণে এখন মানুষ সম্মান করে।’ পড়াশোনা শেষ করে কী হতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার যোগ্যতা অনুযায়ী যেকোনো একটি সরকারি চাকরি করতে চাই।’

নিজের কাজ নিজে করেন জসীম মাতুব্বর
ছবি: প্রথম আলো

জসীমের বাবা হানিফ মাতুব্বর বলেন, ‘এই তো সেদিনের কথা জসীম পিইসি পরীক্ষা দিল। তখন বয়স ছিল ১১ বছর। এরপর জেএসসি, এসএসসির পর এইচএসসি পাস করল। আজ জসীমের বয়স ২০ বছর। সে এখন পূর্ণ যুবক। বাবা হিসেবে ছেলের সাফল্য দেখতে ভালো লাগে। বেঁচে থাকতে ছেলেটাকে প্রতিষ্ঠিত হিসেবে দেখতে পারলে ভালো লাগবে।’

জসীমের মা তছিরন বেগম বলেন, ‘জসীম সব কাজ নিজেই করতে চায়। ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতে পারে। গলার সঙ্গে চেপে ধরে শিশুদের কোলে নিতে পারে। সে মুঠোফোন থেকে ফোন করতে পারে। কৌশলে মাছও ধরতে পারে। ওকে দেখে মনে হয়, সে সব কাজের কাজি। কোনো কাজে তাঁর উৎসাহের ঘাটতি নেই।’

আরও পড়ুন

তালমা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল কুদ্দুস মোল্লা বলেন, জসীমকে ছোটবেলা থেকেই দেখছেন। তাঁর জীবন অনেক কষ্টের। কিন্তু জসীমের ভিক্ষার স্বভাব নেই। তিনি কাজ করেন। পরিবারের বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা করে অদম্য শক্তির জোরে আজ এ পর্যন্ত এসেছেন।

ফরিদপুর সিটি কলেজের অধ্যক্ষ কাজী আফসার উদ্দিন বলেন, জসীমের মধ্যে তিনি আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ দেখেছেন। কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষার সময় প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাঁকে বেশি সময় দিতে চাইলেও তিনি নিতেন না। সুস্থ-স্বাভাবিক অন্য সহপাঠীর মতোই পরীক্ষা দিতেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি দৃঢ় মনোবলের কারণে জসীম অনেক দূরে যেতে পারবে। কোনো বাধা তাকে দমাতে পারবে না।’

আরও পড়ুন

নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনুল হক বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দুপুরে অদম্য জসীমের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। তাঁর সার্বিক খোঁজখবর নিয়েছেন। সব ধরনের প্রয়োজনে জসীমের পাশে থাকবে নগরকান্দা উপজেলা প্রশাসন।