আচরণবিধি ভেঙে মহড়া দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আবদুস সোবহান

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষে সর্বোচ্চ ৫ জন নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানেননি মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবদুস সোবহান
ছবি: প্রথম আলো

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গাড়িবহরে মহড়া দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মাদারীপুর-৩ (কালকিনি, ডাসার ও সদরের একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া ওরফে গোলাপ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশের কাছে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষে তাঁর সমর্থকদের উপচে পড়া ভিড় হলে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুন

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কক্ষে আবদুস সোবহানের সমর্থক কালকিনি পৌরসভার মেয়র এস এম হানিফ, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান সরদারসহ ৮০ থেকে ৯০ জন নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যে কালকিনি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবু ইউসূফসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল নয়টার দিকে আবদুস সোবহান রাজধানী ঢাকা থেকে কয়েকটি গাড়ির বহর নিয়ে বের হন। পরে বেলা ১১টার দিকে তাঁর নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মস্তফাপুর আসার পর তাঁর সঙ্গে দুই শতাধিক মোটরসাইকেল, অন্তত ৯০টি ছোট গাড়ি (মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার), ৭ থেকে ৮টি পিকআপ ভ্যান বহরে যোগ হয়। এরপর বিশাল এক বহর নিয়ে এগিয়ে যান কালকিনি পৌরসভা চত্বরে। এ সময় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভুরঘাটা ও কালকিনি উপজেলার প্রধান সড়কে প্রায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এক ঘণ্টার বেশি সময় দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।

প্রত্যক্ষদর্শী অন্তত ১০ জন জানান, কালকিনি পৌরসভা চত্বরে পৌঁছে গাড়ি থেকে নামেন আবদুস সোবহান। পরে দেড় থেকে দুই হাজার সমর্থক নিয়ে হেঁটে ব্যান্ড পার্টির বাদ্যের সঙ্গে তিনি কালকিনি উপজেলা পরিষদ চত্বরে যান। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সমর্থকদের নিয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান মনোনয়নপত্র জমা দিতে। এ সময় সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতে ও নামতে গিয়ে তিনি ভিড়ের চাপে গলদঘর্ম অবস্থায় পড়েন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালার ৮ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোনো প্রার্থী কোনো ধরনের মিছিল কিংবা শোডাউন করতে পারবেন না। (ক) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী, ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোনো যান্ত্রিক যানবাহনসহকারে মিছিল বা শোডাউন করতে পারবেন না।

আবদুস সোবহান প্রশাসনের চোখের সামনে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ম্যাজিস্ট্রেট কোনো কিছুই করেননি। আবদুস সোবহান গোলাপ নিজের আধিপত্য দেখানোর জন্য লোক ভাড়া করে শোডাউন করেছেন। তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেউ নেই, জনগণ নেই।’

মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে উপজেলা চত্বরে হ্যান্ড মাইকে নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন আবদুস সোবহান, যা আচরণবিধি লঙ্ঘন। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ একাধিক প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন করা যাবে না। প্রতীক বরাদ্দ না হওয়ার আগপর্যন্ত প্রচারও আমরা করব না। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় নেতা–কর্মীরা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করেছেন, সহযোদ্ধা হয়েছেন, সহশক্তি হয়ে এখানে এসেছেন। আনন্দ–উৎসবের মধ্য দিয়ে নেতা–কর্মীরা আমাকে সাহায্য–সহযোগিতা করেছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাঁদেরকে ধন্যবাদ।’

আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আচরণবিধি দেখার জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করতে সর্বোচ্চ পাঁচজন আনতে পারবেন। আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী শতাধিক সমর্থক নিয়ে মনোনয়ন দাখিলের কথা বলা হলে তিনি বলেন, ‘যাবতীয় বিষয়টি আমি ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তা ছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে এখনো আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ কেউ করেনি। অভিযোগ করলে বিধি মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা নেব।’

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আচরণবিধি দেখার জন্য আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা আছে। তাঁদের সামনে বিধি লঙ্ঘন কিছু ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া কালকিনির বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’