মুন্সিগঞ্জে নৌকার বিজয় মিছিল থেকে যুবকের ওপর হামলা, কবজি বিচ্ছিন্ন

হামলা
প্রতীকী ছবি

মুন্সিগঞ্জ-১ (শ্রীনগর ও সিরাজদিখান) আসনের সিরাজদিখান উপজেলায় নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমদের সমর্থকদের বিজয় মিছিল থেকে এক যুবকের ওপর হামলা চালিয়ে তাঁর বাঁ হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জ উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের খালপাড়া সেতুর ওপর এ ঘটনা ঘটে।

আহত যুবকের নাম মো. নয়ন মিয়া (৩০)। তিনি সিরাজদিখান উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. জামালের ছেলে। নয়ন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর স্ত্রী, চার বছরের ছেলে ইয়ামিন এবং তাঁর মা পারভিন বেগমসহ চারজনের সংসার। তিনি আসনটির ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ারের সমর্থক।

আরও পড়ুন

আসনটিতে নৌকার প্রার্থী সিরাজদিখান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তিনবারের সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন ৯৫ হাজার ৮৬০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার পেয়েছেন ৬১ হাজার ৫৪০ ভোট।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার বরাতে জানা যায়, নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর নৌকার মিছিল বের করে চিত্রকোট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের লোকজন। মিছিলটি স্থানীয় খালপাড়া সেতু এলাকা অতিক্রম করছিল। এ সময় খালপাড় সেতু দিয়ে পাশের রাজানগর বাজার থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন নয়ন। মিছিল থেকে পাঁচ–সাতজন এসে নয়নকে বেদম পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাঁর বাঁ হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।

এ বিষয়ে চিত্রকোট ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল হুদা (বাবুল) প্রথম আলোকে বলেন, ‘নয়নের বাড়ি আমার বাড়ির পাশেই। ওদের যেকোনো সুখ-দুঃখে পাশে থাকি। এবার নির্বাচনে আমি ট্রাক প্রতীকের পক্ষে ছিলাম। নয়নও আমার সঙ্গে ছিল। শুধু ট্রাকের সমর্থন করায় স্থানীয় নুরে আলম, জয়নাল, জয়নালের ছেলে ফাহাদ, আবদুল কাদের, জহিরুল ইসলাম সোহাগ, সাকিবসহ কয়েকজন নয়নের হাত কেটে দিল। হাত কাটার পরে ৩০-৪০ মিনিট তাঁকে সেতুর ওপর ফেলে রেখেছিল। মানুষ কতটা নির্মম হলে এমন কাজ করতে পারে। পরে পুলিশকে খবর দিলে নয়নকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা চলছে নয়নের। রাত সোয়া একটার দিকে তাঁর মা পারভীন বেগমের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে বলেন, ‘আমার কোনো ছেলেমেয়ে নেই। নয়নকে দত্তক এনে পেলেপুশে বড় করেছি। নয়নের বাবা কয়েক বছর আগে মারা গেছে। নয়নকে বিয়ে করিয়েছি। ওর একটি সন্তান আছে। আমাদের পরিবারে একমাত্র উপার্জনের ক্ষম ছিল নয়ন। ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করায় ওর হাতটা কেটে নিল। আমার ছেলেটার শরীরের সব রক্ত বের গেছে, ছেলে চোখ খোলে না। আমরা এখন কার কাছে যাব, কোথায় যাব, কোথায় গেলে এমন নির্মমতার বিচার পাব। আমাদের সংসার কীভাবে চলবে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমদকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

নয়নের হাত বিচ্ছিন্নের ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুজাহিদুল ইসলামও। ভুক্তভোগী যুবককে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা কী, তার তদন্ত চলছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত যাদের নাম এসেছে, পুলিশ তাদের আটক করতে অভিযান চালাচ্ছে।