ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের টানা কর্মবিরতি, রোগীদের ভোগান্তি

শয্যাসংকটে অনেক রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে রোগীদের দুর্ভোগ বেড়েছেছবি: প্রথম আলো

বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবিতে ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কাজে হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বুধবার চতুর্থ দিনের মতো এই কর্মবিরতি চলছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।

ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ (ইচিপ) ভাতা ১৫ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ হাজার টাকা এবং নিরাপত্তার দাবিতে গত রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি শুরু করে। দাবি পূরণ না হওয়ায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা পর্যন্ত এই কর্মসূচির সময় বাড়ানো হয়েছে। সারা দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে কোনো শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে কাজ করতে দেখা যায়নি। হাসপাতালে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। শয্যা না পাওয়ায় হাসপাতালের বারান্দায় মেঝেতে রেখে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এখানে ১৩৫ থেকে ১৪০ জন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক রয়েছেন। আন্দোলনরত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা যাতে ব্যাহত না হয়, এ জন্য কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া ৩৬ জন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক নিয়ে একটি জরুরি দল গঠন করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি পরিস্থিতিতে তাঁদের ডাকতে পারে। তখন তাঁরা আপৎকালীন সময়ের জন্য কাজ করবেন। তবে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কর্মরত নার্সরা জানিয়েছেন, কর্মবিরতি পালনকালে তাঁরা কোনো শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে কাজ করতে দেখেননি।

পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে শয্যা না পেয়ে বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নাড়ুয়া ইউনিয়নের কোনগ্রামের মমিন লস্কর (৮৫)। তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে আজ ভোরে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর ছেলে নাসিরুল হক আজ দুপুরে বলেন, ‘ভোরে ডাক্তার একবার দেখেছেন। এরপর আর কেউ খোঁজখবর নেননি। এখন দুপুর হয়ে গেল। বড় ডাক্তার এসেছিলেন, কিন্তু তিনি না দেখে চলে গেছেন।’

মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে অসুস্থ মাকে নিয়ে এসেছেন ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের মৃগী গ্রামের রাজিয়া বেগম। তাঁর মা রাবেয়া বেগমের (৬০) শরীরের বাঁ পাশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত। শয্যা না পেয়ে তাঁর চিকিৎসা চলছে করিডোরে। রাজিয়া বেগম জানান, ‘আজ সকাল আটটার দিকে মাকে নিয়ে এসেছি। একবার ডাক্তার দেখেছেন। এরপর আর কোনো ডাক্তার আসেননি।’

হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক নাঈম আল ফুয়াদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত সোমবার আমাদের সংগঠন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিন্তু আমাদের দাবির ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস বা ঘোষণা না দেওয়ায় ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ (ইচিপ) কর্মবিরতির মেয়াদ আগামী বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা পর্যন্ত বর্ধিত করেছে।’

হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) পরিচালক দীপক কুমার বিশ্বাস জানান, শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কর্মবিরতি পালন করছেন। রোগীদের ভোগান্তি এড়াতে যে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক যে ওয়ার্ডে কর্মরত আছেন, সেই ওয়ার্ডের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার কাজ করছেন। এই কর্মবিরতি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় তেমন বাধা হচ্ছে না।