সিলেটে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের মামলা, আসামি ৬০০
সিলেট সদর উপজেলার সোনাতলায় সড়কের পানিনিষ্কাশন নিয়ে দুই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে জালালাবাদ থানায় পুলিশকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে মামলাটি করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
জালালাবাদ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এ মামলায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, সংঘর্ষে আহত চার পুলিশ সদস্য চিকিৎসাধীন আছেন। তবে এলাকায় পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার বেলা দুইটার দিকে কুমারগাঁও-বাধাঘাট সড়কের পাশে নালা কাটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সোনাতলা ও মইয়ারচর এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর আগে জলাবদ্ধতার প্রতিবাদে বেলা ১১টার দিকে কুমারগাঁও-বাধাঘাট সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় লোকজন। এ সময় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে¦বিক্ষোভ করা হয়। বেলা দুইটার দিকে সড়ক মেরামতে নিয়োজিত কর্মীরা পানিনিষ্কাশনের জন্য সড়কের পাশে নালা কাটতে গেলে দুই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়ান তাঁরা।
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীন কুমারগাঁও-বাধাঘাট সড়কটি চার লেনের কাজ চলছে। এর কারণে সড়কের পাশে মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। সড়কের পাশে অপরিকল্পিতভাবে মাটি না ফেলে পাকা নালা নির্মাণের দাবি ছিল স্থানীয় লোকজনের। এ ছাড়া মাটিগুলো যাতে সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া হয়, কিন্তু সেগুলো সরানো হয়নি।
বুধবার ভোর থেকে সিলেটে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এতে সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়লেও পানিনিষ্কাশনের পথ না থাকায় নিচু এলাকা মইয়ারচর, নয়া কুরুমখলা, নাজিরেরগাঁও এলাকায় পানি জমে বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে। এর প্রতিবাদে সিলেট সিটির নবগঠিত ৩৮ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের মইয়ারচর, নয়া কুরুমখলা, নাজিরেরগাঁও এলাকার বাসিন্দারা কুমারগাঁও-বাধাঘাট সড়ক অবরোধ করেন।
সোনাতলা এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে চলাচলে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা। সোনাতলা বাজারেও সড়কের পাশের মাটি কেটে রাখায় বাজারে আসা লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বুধবার পানিনিষ্কাশনে সওজের কর্মীরা সড়কের পাশে নালা কাটতে গেলে তাঁরা বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। সংঘর্ষ থামাতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
স্থানীয় লোকজন বলেন, ঘটনার সময় একপর্যায়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করা হয়। দুটি পক্ষের হাজারখানেক লোক জড়ো হয়ে যায়। একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে সোনতালা বাজার এলাকার বেশ কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। সড়কে থাকা যানবাহন ভাঙচুর হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। পরে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। একপর্যায়ে বিজিবি সদস্যরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাদের সমঝোতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এতে পুলিশসহ দুই পক্ষের প্রায় অর্ধশত মানুষ আহত হন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সড়কের নালার কাজে এক পক্ষ বাধা দিচ্ছিল, আরেক পক্ষ কাটতে চাচ্ছিল। এর মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, সংঘর্ষ থামাতে ১৪৪টি রাবার বুলেট এবং ১৪টি টিয়ারগ্যাস ছোড়া হয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। তবে সংঘর্ষে চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।