মৃত্যুর আগের দিন বাবা-মেয়ে একসঙ্গে ছিলেন, সেই স্মৃতি মনে করে কাঁদছেন মেয়ে

সাংবাদিক গোলাম রব্বানি মেয়ে রাব্বীলা তুল জান্নাত
ছবি: প্রথম আলো

জামালপুরের বকশীগঞ্জে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানি গত বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ময়মনসিংহে ছিলেন। মেয়ে রাব্বীলা তুল জান্নাতকে কলেজে ভর্তি ও আদালতে মামলার খোঁজখবর নিতে ময়মনসিংহে গিয়েছিলেন তিনি। ওই দিন সারা দিন বাবার সঙ্গে ছিলেন জান্নাত। পরের দিন বৃহস্পতিবার তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বাবার সঙ্গে কাটানো সময়ের কথা মনে করে অনবরত কাঁদছেন তিনি। কারও সান্ত্বনা সেই কান্না থামাতে পারছে না।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে জান্নাত বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন একজন সাহসী সাংবাদিক। সেটা তিনি প্রমাণ করেছেন। আমাদের পরিবারের আর কেউ নাই। বাবাই ছিলেন আমাদের একমাত্র ছায়া।’

আরও পড়ুন

আজ শনিবার দুপুরে বকশীগঞ্জ উপজেলা শহরের গরুহাটি কাচারিপাড়া এলাকায় নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানির গ্রামের বাড়িতে বসে তিনি এসব কথা বলেন।

সাংবাদিক গোলাম রব্বানীর তিন সন্তান। রাব্বীলা তুল জান্নাত দ্বিতীয়। ২০২০ সালে বকশীগঞ্জ উলফাতুল নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২২ সালে বকশীগঞ্জের আলহাজ গাজী আমানুজ্জামান মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। বুধবার ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে স্নাতকে ভর্তি হতে বাবার সঙ্গে ময়মনসিংহে গিয়েছিলেন জান্নাত।

আরও পড়ুন
সাংবাদিক গোলাম রব্বানি
ছবি: সংগৃহীত

বাবার সঙ্গে থাকা শেষ সময়ের স্মৃতিচারণ করে জান্নাত বলেন, ‘বাবার সঙ্গে ময়মনসিংহে গিয়েছিলাম। ওই চেয়ারম্যান (সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম) যে আমার বাবার বিরুদ্ধে ময়মনসিংহে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছিল, সেটার জন্য কোর্টে গিয়েছিলাম। মিথ্যা মামলা খারিজ হওয়ার কাগজও বাবা তোলেন। সঙ্গে আমিও ছিলাম। সেখান থেকে বাবা ওই চেয়ারম্যানের ছেলেকে ফোন করেছিলেন। বাবা তাঁকে বলেছিলেন, তোমার (চেয়ারম্যানের ছেলে) বাবা বলেন, “আমার বিরুদ্ধে মামলা দেয়নি, এখন তো আমার হাতে কাগজ আছে। মামলা খারিজ হয়েছে।” ওই সময় চেয়ারম্যানের ছেলে বাবাকে হুমকি দেন, “বকশীগঞ্জে আই, তোরে (সাংবাদিক) মাইরে ফেলব।” সেখান থেকে বকশীগঞ্জে যাওয়ার পরই বাবাকে তারা হত্যা করল।’

রাব্বীলা তুল জান্নাত বলতে থাকেন, ‘ওইটা বাবার সঙ্গে কাটানো আমার শেষ সময়। ওই দিনই বাবার সঙ্গে দুপুরে শেষ খাওয়া খেয়েছিলাম। বারবার চোখের সামনে বাবার ওই দিনের চেহারা ভেসে উঠছে। আমি মানতেই পারছি না। এখন কে আমাকে ময়মনসিংহে নিয়ে যাবে? কে আমাকে আদর করবে? বাবার মুখটা মনে পড়লেই হাউমাউ করে কান্না আসে। আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই।’

আরও পড়ুন

বুধবার রাত ১০টার দিকে বাড়িতে ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি মোড়ে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন সাংবাদিক গোলাম রব্বানি। এ সময় তাঁকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাঁকে ফেলে পালিয়ে যায়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়। গোলাম রব্বানি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলার সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করতেন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন